বড়লেখায় বন্যায় ২০০ গ্রাম প্লাবিত, শিশুসহ নিহত ২


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বড়লেখায় বন্যায় ২০০ গ্রাম প্লাবিত, শিশুসহ নিহত ২

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পৌরশহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি উঠেছে। এছাড়া উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। এছাড়া পানিতে চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। 

এদিকে শনিবার (১৮ জুন) সকাল সাড়ে ৯ টায় ভারী বর্ষণে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির আয়েশাবাদ চা বাগানে টিলা ধসে রাজন ব্যুনার্জি (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় চারজন আহত হয়েছেন। এছাড়া বড়লেখা সদর ইউপির কেছরিগুল গ্রামে টিলা ধসে একজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে শনিবার তলিয়ে যাওয়া এক শিশুর মরদেহ রোববার (১৯ জুন) উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই শিশুর নাম জানা যায়নি। 

সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন, পুরো জেলার মধ্যে বন্যায় বড়লেখা উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি সভা করেছেন। এসময় তিনি জনদুর্ভোগ লাগবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন।

উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, ‍“আয়েশাবাগ চা বাগানে শনিবার সকালে টিলা ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় চারজন আহত হয়েছেন। টিলার পাদদেশে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। তাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।” 

বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, “ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা পৌরসভার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। এতে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোববার শহর থেকে পানি নেমে গেলেও পৌরসভার নিচু এলাকা এখনও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এছাড়া পৌরশহরের প্রায় সবকটি দোকানে পানি উঠে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা হয়নি।  এছাড়া আদিত্যের মহাল এলাকায় শনিবার ঢলের পানিতে পড়ে তলিয়ে যাওয়া এক শিশুর মরদেহ রোববার সকালে উদ্ধার করা হয়েছে।”
 
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জনবাণীকে বলেন, “বড়লেখায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও টিলা ধস প্রতিরোধে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ২১ টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খান জনবাণীকে বলেন, “বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে। রোববার আমরা পানিবন্দি  এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করেছি।” 

পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম এমাজ উদ্দিন সরদার রোববার দুপুরে জনবাণীকে বলেন, “ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত ছিলো। পানি এখন নেমেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যেতে পারে।” 

তিনি আরো বলেন, “ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্নস্থানে ২০টি বড় গাছ পড়েছে। ১৮টি স্থানে তার ছিড়েছে। ২২টি স্থানের কোথাও পল্লী বিদ্যুতের পোল ভেঙে গেছে, কোথাও হেলে পড়েছে ও আবার কোথাও তা পড়ে গেছে। ২৬টি মিটার ভেঙে গেছে। ১৬টি ইন্সুলেটর ভেঙে গেছে। ৮টি ক্রস আর্ম ভেঙে গেছে। ১২টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে। ২১ কিলোমিটার লাইন পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। পল্লীবিদ্যুতের লোকজন লাইন মেরামতে কাজ করছেন। পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।” 

বড়লেখা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শামীম মোল্লা রোববার দুপুরে জনবাণীকে বলেন, “ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়েকের বিভিন্নস্থানে  তলিয়ে গিয়েছিল। আমাদের ফায়ার সার্ভিসে পানি উঠেছিলো। আজ ভোরে (রোববার) পানি নেমে গেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”

এসএ/