শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনম্যান্ট স্কুলের ডিজিটাল ল্যাব কার্যক্রম বন্ধ
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটিতে দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে শিক্ষাখাতে। তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামোগত উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ইতিহাস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের স্মরণে কম্পিউটার ল্যাবগুলোকে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ নামে নামকরণ করা হয়েছিল।
২০১৬ সালের আগষ্টে ল্যাব স্থাপনার কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি বলেছিলেন, উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো দেশ। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আইসিটি ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
তবে সঠিক তত্বাবধানের অভাবে অনেক ল্যাব অঙ্কুরেই বিনষ্টের পথে। কিছু কিছু ল্যাব এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। দক্ষ জনবল না থাকায় এসব ল্যাব সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনম্যান্টে স্কুলের ল্যাবটি দখল করে বসার রুম হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মোঃ সরোয়ারের বিরুদ্ধে। শেখ রাসেল রাসেল ডিজিটাল ল্যাব থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে (২০১৬-২০১৯) রাজধানীতে প্রায় দেড়শো শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়। সেই সময় ক্যান্টনম্যান্ট শহীদ রমিজ উদ্দিন বিদ্যালয়ের (এসআরডিএল কোড-৩২২৮০) প্রধান শিক্ষক মোঃ মনির উদ্দিনের তত্বাবধানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের এপ্রিলে ল্যাবের কাজ সমাপ্ত করে স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলামের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এরপরে ২০১৯ সালের শেষে কে এম সরোয়ার প্রধান শিক্ষক হওয়ার পরে চলতি বছরের শুরুতে কক্ষ সংকটের অজুহাতে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব বন্ধ করে নিজের অফিস কক্ষ বানিয়ে স্কুল পরিচালনা করে আসছেন। এতে ডিজিটাল ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে।
যদিও ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনের সময় ২০ জন শিক্ষার্থী বসার মতো ল্যাব কক্ষ সাজানো হয়েছিল স্কুলে। প্রতিটি ল্যাবের মত এই স্কুলের ল্যাবেও আইটি সরঞ্জামের মধ্যে ১৭টি ল্যাপটপ, একটি লেজার প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর (স্ক্রিনসহ), দ্রুত গতির ইন্টারনেটের জন্য রাউটার ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ করেন। তবে সঠিকভাবে রক্ষণবেক্ষণ ও ব্যবহার না হওয়ায় এইসব সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে মোট ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাবসহ সারা দেশের দুই হাজার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’। সৌদি আরবে ১৫টি সহ মোট ৪ হাজার ১৭৬টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সেকেন্ডারি স্কুলে ২৬২৭ টি, কলেজে ৮৫৪টি, মাদ্রাসায় ৩৯২টি, কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ১২৮টি, প্রাইমারি স্কুলে ১৫টি ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে (২০১৬-২০১৯) রাজধানীতে প্রায় দেড়শো প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ২৭৬ ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আরও পাঁচ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ল্যাব স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমে প্রতিবছর ১০ লাখ শিক্ষার্থী আইসিটি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাবে। শিক্ষার্থীদের আইসিটি ক্ষেত্রে সামর্থ্য বাড়ানো ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এসব ল্যাব। প্রতিটি ল্যাব মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সাইবার সেন্টার ও ট্রেনিং ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এখানে শিক্ষার্থী ছাড়াও আগ্রহী তরুণ-তরুণীরা আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
প্রতিটি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যাবগুলো পরিচালনা কমিটি গঠন করলেও সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না বলে জানা যায়।
শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনম্যান্ট স্কুলের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কে এম সরোয়ার সহকারী প্রধান শিক্ষক জসিমউদ্দিনের সাথে কথা বলতে বলেন।
সহকারি শিক্ষক বলেন, “আমরা আপাতত রুম সংকটের কারণে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের সরঞ্জামগুলো অন্য ল্যাবে রেখে দিয়েছি। আমাদের নতুন একটা ছয়তলা বিল্ডিং এর কাজ চলছে। বিল্ডিংয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের জন্য কক্ষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কাজ শেষ হলে আমরা সেখানে নতুন করে ল্যাব স্থাপন করবো।”
সরঞ্জাম ব্যবহার না করে রেখে দিলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনার কথা বললে তিনি বলেন, “আমরা মাঝে মাঝে চেক-আপ করে দেখি।”
সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, “আসলে আমি এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু জানি না। তবে তারা হয়তো কোন কাজ করার কারণে সাময়িকভাবে সরঞ্জাম সরিয়েছে। এ বিষয়ে আমি পরে খোঁজ নিব।”
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা-পরিচালক রেজাউল মাকসুদ জাহেদী বলেন, “এ বিষয়ে আমি জানিনা। আগামীকাল এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ”
তিনি আরো বলেন, “আমরা এটা ব্যবহার করার জন্য দিয়েছি। তারা এটা বন্ধ করতে পারে না।”
এসএ/