স্ত্রীকে হত্যা করতে ঝালকাঠি থেকে ঢাকা আনেন ফারুখ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


স্ত্রীকে হত্যা করতে ঝালকাঠি থেকে ঢাকা আনেন ফারুখ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: যৌতুকের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার না পেয়ে ঝালকাঠির এক সন্তানের জননী সুমাইয়া আফরিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার জন্য ঢাকায় নিয়ে গিয়ে ছিলেন তার স্বামী ওমর ফারুক। এমনই একটি অভিযোগ দায়ের করে থানায় মামলা করেছেন নিহত সুমাইয়ার বাবা মনিরুজ্জামান তালুকদার। মামলায় আসামি করা হয়েছে তার স্বামী ওমর ফারুক, শ্বশুর, শাশুড়িসহ আরও দুই জনকে।

মামলায় নিহতর বাবা উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী ওমর ফারুক যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় সুমাইয়াকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় সময় তার মেয়ে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে আসতেন। পরে তাকে বুঝিয়ে কয়েকবার পুনরায় তার শশুর বাড়িতে দিয়েও এসেছিলেন তিনি।

নিহতের বাবা মনিরুজ্জামান বলেন, সুমাইয়ার স্বামী ওমর ফারুক ঢাকার সদরঘাটে কাপড়ের ব্যবসা করতো। সুমাইয়াকে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলার জন্য হত্যার ১৯ দিন পূর্বে রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা রোডের মো. ইয়াছিন হাওলাদারের ফ্ল্যাট ভাড়া করে সুমাইয়া এবং তার ৬ মাসের সন্তানকে নিয়ে বসবাস শুরু করেছিলো ওমর ফারুক। ওই বাড়িতে থাকাবস্থায়ও সুমাইয়াকে মানসিকভাবে অত্যাচার করতো স্বামী ওমর ফারুক।

তিনি আরও বলেন, হত্যার আগের দিন সুমাইয়া তার মা’কে ফোন করে জানিয়েছিলো স্বামী তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করছে। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি রাত সোয়া ১১টায় সুমাইয়ার মাকে ফোন করে জামাতা ওমর ফারুক জানান, আপনার মেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। আপনারা এখনই ঢাকায় আসেন। আপনার মেয়ের অবস্থা বেশি একটা ভালো না। তাৎক্ষনিকভাবে সুমাইয়ার মা-বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকায় গেলে ওমর ফারুক তার শ্বশুরবাড়ির লোকদের জানান সুমাইয়া ওড়না দিয়ে ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

ওই ফ্ল্যাটের পার্শ্ববর্তী রুমের লোকজনের বরাত দিয়ে সুমাইয়ার বাবা বলেন, ঘটনার সময় পাশের রুমের লোকজন এসে তার মেয়েকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করে আইসিইউতে রেফার করেন। গত ১৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমাইয়ার মৃত্যু হয়।

তবে সুমাইয়ার পরিবারের দাবি তার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। সুমাইয়াকে হত্যা করার জন্যই তার স্বামী ওমর ফারুক পরিকল্পিতভাবে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে।

এ মামলায় অভিযুক্ত ১ নম্বর আসামি ওমর ফারুককে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ আটক করে আদালতে প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওমর ফারুকের বড় ভাই ফোরকান বলেন, যৌতুকের জন্য তাকে শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। এমন কি তাকে হত্যাও করা হয়নি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যা করেছে বলে তাদের দাবি।

তিনি আরও বলেন, লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যদি আসে আমার ভাই তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। তাহলে আদালত যে বিচার করবে সেটাই আমরা মেনে নিবো। কিন্তু তার আগে আমার ভাইকে অপরাধী বলা যায় না।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (সাব-ইন্সপেক্টর) মাহমুদা রহমান জনবাণীকে বলেন, হত্যার অভিযোগ এনে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার ১ নং আসামিকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করেছি। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টাও চলছে।

এসএ/