পাঁচ বছর ধরে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি করতো ওরা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
পবিত্র ঈদ উল আযহা’কে কেন্দ্র করে মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকা হতে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের ৯ জন সক্রিয় সদস্যকে দেশি-বিদেশী অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
সোমবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাতে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্যদের গ্রেফতার করে র্যাব।
আসামিরা হলেন- গাইবান্ধার মফিজ উদ্দিন শেখের ছেলে মোঃ শহিদুল ইসলাম(৩৪)। একই জেলার খোকন মিয়ার ছেলে মোঃ শাহিন @ সজিব (৩৩)। মৃত কিনার আলী খন্দকারের ছেলে মোঃ শহিদ (৩৮)। বাদশা তশিলদার @ নজরুলএর ছেলে মোঃ রনি সরকার (২৪)। রংপুর জেলার মৃত আঃ জব্বারের ছেলে মোঃ আয়নাল মিয়া @ আয়নাল হক @ আয়নাল (৩৯)। একই জেলার মৃত খয়রাজ্জামানের ছেলে মোঃ আন্ডু মিয়া (৫৭)। মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে মোঃ আজিজুল ইসলাম @ আইনুল (৩২)। মৃত বিনোদ চন্দ্র মহন্ত @ বিপিন এর ছেলে উজ্জল চন্দ্র মহন্ত (২৭)। নীলফামারীর মৃত টিপু সুলতানের ছেলে মোঃ আব্দুল হাকিম @ গাটু @ আব্দুল গাটু মিয়া (৪০)।
এসময় আসামীদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১ টি বিদেশী পিস্তল, ১ টি ওয়ান শুটারগান, ১ টি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ২ টি ওয়ান শুটার গানের গুলি, ২ টি ছোরা, ১ টি রামদা, ১ টি দা, ৫ টি গামছা, ১ টি রশি, ১ টি করাত, ২ টি টর্চ লাইট, ১ টি বস্তা, ১১ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ এক হাজার পাঁচশত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই চক্রের তৎপরতা সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ছিনতাই/ডাকাত দলের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে অস্ত্রাঘাত করে বাস, প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল, গাড়ী, টাকা পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি ছিনতাই/ডাকাতি করে জন জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। তাদের ছিনতাই/ডাকাতির ভয়ে এলাকার লোকজন সর্বদা আতংকে থাকে। র্যাব-১ দীর্ঘ দিন যাবত এ চক্রকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাবের সকল ধরনের গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এসব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ১০/১২ জন। এই ডাকাত চক্রের সর্দার শহিদুল ইসলাম। তার অন্যতম সহযোগী আন্ডু মিয়া ও আয়নাল মিয়া যারা ডাকাতির পরিকল্পনা এবং অন্যান্য ডাকাতদের সংঘবদ্ধ করে থাকে। তারা গত ৫ বছর যাবত একই সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে রংপুর এবং গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল। প্রথমে তারা চুরি এবং ছিনতাই এর সাথে জড়িত থাকলেও বিভিন্ন দফায় জেলে থাকার কারণে গত কয়েক বছর যাবত ডাকাতির পেশায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে।
গ্রেফতারকৃত শহিদুল ইসলামকে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে জানা যায় যে, সে এই ডাকাত চক্রের মূলহোতা। সে পূর্বে রিক্সা চালনা পেশা সাথে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে সে সহজলভ্য এবং বেশী অর্থের লোভে ডাকাতির পেশায় জড়িয়ে পড়ে। তারা সাধারণত প্রতিমাসে ২/৩ বার ৬/৯ জনের দলে সংঘঠিত হয়ে প্রথম দিকে রংপুর ও পরবর্তীতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও মহাসড়ক কেন্দ্রিক ডাকাতির সাথে জড়িত। ডাকাতির কৌশল হিসাবে তারা সড়কসমূহের নির্জন স্থানে রাতের আধাঁরে গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত। পরবর্তীতে তারা ইজিবাইক/অটোরিক্সা/সিএনজি/মোটর সাইকেল/ছোট পিকআপসহ ছোট আকারের যানবাহনকে টার্গেট করে অস্ত্রের মুখে ভিকটিমদেরকে জিম্মি করে ডাকাতি করত। তারা আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে বড় আকারে ডাকাতি করার জন্য গাজীপুর জেলার গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকায় সংঘঠিত হয়েছিল। আটককৃত শহিদুলের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি, ধর্ষণসহ ৬ টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আয়নাল মিয়াকে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে জানা যায় যে, সে এ ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী এবং ডাকাতি সংঘটনের জন্য সে গাজীপুরের জেলার গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকায় একটি অস্থায়ী আবাসস্থল ঠিক করেছিল। সে দীর্ঘ ৫ বছর যাবত চুরি এবং ডাকাতির চক্রের সাথে জড়িত। সে পূর্বে পেশায় একজন অটোরিক্সা চালক ছিল। সে প্রথমে সহজলভ্য এবং অধিক অর্থের আশায় তার নিজ এলাকায় ছোট ছোট চুরির সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে একই এলাকার উক্ত ডাকাত চক্রের সর্দার শহিদুল ইসলামের সাথে পরিচয়ের পর তার সাথে ডাকাতি চক্রে জড়িয়ে পড়ে। আইনাল মিয়ার মূল দায়িত্ব ছিল জায়গা নির্ধারণ এবং অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের সংঘবদ্ধ করা। এছাড়া ডাকাতির স্থান এবং ক্ষণ নির্ধারিত হলে অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের নিজ এলাকা থেকে নিয়ে এসে তার আবাসস্থলে অবস্থান করায়। সাধারণত ডাকাতির পর লুন্ঠিত মালামাল সে ডাকাত সর্দারের নির্দেশে অন্যান্য সদস্যদের মাঝে বন্টন করত। এছাড়াও সে ছোট ছোট মাদক চোরাচালানের সাথেও জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। আটককৃত আইনালের বিরুদ্ধে চুরি ও ডাকাতিসহ ৪ টি মামলা রয়েছে।
এসএ/