স্বর্গ থেকে ইসি এনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না: ফখরুল
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হলে বিএনপির অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার থাকতে হবে। তা না হলে স্বর্গ থেকেও যদি নির্বাচন কমিশনার নিয়ে আসেন, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবেন না।’
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) গুলশানে চেয়ারপারসনর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। সোমবার (৪ জুলাই) রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘জনগণের রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, হাজারটা পদ্মা সেতু করেও কোনো লাভ হবে না। ফখরুল বলেন ‘আইয়ুব খান যে উন্নয়ন করেছিল পাকিস্তান আমলে…কিন্তু জনগণের রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, গণতন্ত্র যদি না থাকে, ভোটাধিকার যদি না থাকে, সেখানে কিন্তু কোনো লাভ হয় না। হাজারটা পদ্মা সেতু করেও কোনো লাভ হয় না। দেশের জনগণ আমাদের পাশে থেকে বারবার ভোট দিচ্ছে। আমাদের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আছে’, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব প্রশ্ন তোলেন, ভোট দিচ্ছে কোথায়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ ভোট দিতে পারছে কোথায় যে জনগণের আস্থাটা তিনি গ্রহণ করছেন। তিনি তো কাগজে-কলমে সিল মেরে আগের রাতে ভোট দিচ্ছেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের মতো আরকি। নির্বাচন দিয়ে দেখুন না, তাঁদের প্রতি কতটুকু আস্থা আছে?’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে না দাঁড়ানো, সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারি ও গৃহগণনা না হওয়া, সারা দেশে লোডশেডিং, সাভারে স্কুলশিক্ষক হত্যা ও নড়াইলে অধ্যক্ষকে অপমানের ঘটনা বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার কারণেই হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, সরকার বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসনে সরকারের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়। অবিলম্বে দুর্গত মানুষকে খাদ্য, বস্ত্র, গৃহনির্মাণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থার জোর দাবি জানানো হয়।
জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ সঠিকভাবে হয়নি, পরিকল্পনামন্ত্রীর এমন বক্তব্যের উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, মন্ত্রীর স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যায় কী অবস্থা। প্রকৃতপক্ষে জনশুমারি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের আমলে সব ধরনের সমীক্ষা, জরিপ ও তথ্য সংগ্রহের কাজ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হওয়ায় প্রকৃত তথ্য কখনোই পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সব তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিএনপি সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারি ও গৃহগণনার ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সম্প্রতি সাভারে স্কুলশিক্ষক হত্যার ঘটনা, নড়াইলে অধ্যক্ষকে অপমানসহ সারা দেশে সামাজিক নৈরাজ্যের চিত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, এই অনির্বাচিত সরকোরের কোনো দায়বদ্ধতা না থাকায় সমাজের সব পর্যায়ে নীতি-নৈতিকতার চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট এবং সরকার গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টি করলেই সমাজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
লোডশেডিংয়ের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচণ্ড লোডশেডিং হচ্ছে, এটা ভয়াবহ। তিনি বলেন, সরকারের যে শতভাগ বিদ্যুতের কথা বলে আসছে, আজকের এই অবস্থা (লোডশেডিং) প্রমাণ করে যে সেগুলো বাকসর্বস্ব কথা। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা, এসব করে নিজেদের পকেট ভারী করা, বিদেশে গিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইডিএফ’ না দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাড়ে সাত মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদানের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৪ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ এ ধরনের ঋণের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে। সরকার অর্থনীতির সব নিয়মকানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সব বিধি ভঙ্গ করে শুধু নিজেদের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে। ইডিএফ ঋণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ব্যবসা, স্থাপনা তৈরি করে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি করছে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব সামাজিক ও অর্থনীতি ও সমগ্র অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে ফেলবে বলে অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
ওআ/