ঈদেও পর্যটক শূন্য কমলগঞ্জ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ঈদেও পর্যটক শূন্য কমলগঞ্জ

ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটো ও বাস নিয়ে আসা পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠতো প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার প্রভাবে সিলেট বিভাগ পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। উপজেলার হোটেল রিসোর্টের বেশির ভাগই ফাঁকা পড়ে আছে। সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়ে পর্যটণ সংশ্লিষ্টরা কাঙ্খিত পর্যটক না আসায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। 

এদিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকিট কাউন্টার থেকে জানা যায়, ঈদের দিন  রবিবার মোট ২৩ হাজার ৫শত ৫৩ টাকা,দ্বিতীয় দিন সোমবার ৭৪ হাজার ৯শত ৫৩ টাকা, ৩য় দিন মঙ্গলবার  বিকাল  প্রায় ৪৫ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা অন্যান্য বছরের চেয়ে ৬৫% কম।

 প্রতিটি ঈদে যেখানে মৌলভীবাজারের চায়ের রাজধানী খ্যাত কমলগঞ্জ পর্যটন স্পটগুলো দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত থাকতো এবার স্মরণকালে ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় লোকজন শূন্য হয়ে আছে। নেই কোথাও কোলাহল, অনেকটা নির্জীব জনশূন্য গোটা জেলার পর্যটন স্পটগুলো। নানা বয়সের মানুষকে রঙিন পোশাক পরে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে না পর্যটকদের। কমলগঞ্জের সব পর্যটন স্থানে অনেকটা একরকমের দৃশ্য।

জীববৈচিত্র্যে ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা-বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘী, ২শ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলিনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামন্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মনিপুরী, প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরী, টিপরা ও গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়। কিন্তু সবুজ প্রকৃতি এবার টানতে পারছে না পর্যটকদের।

কমলগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তেমন পর্যটকের দেখা মেলেনি। কিছু পর্যটককে বিকেলে দেখা গেছে। চা-বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, পদ্মছড়া লেক,বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমান সৃতিসৌধ্য,তাছাড়াও খাসিয়া পল্লী ও মনিপুরী পাড়াতে সাধারণ ছুটির দিনে যে মানুষ থাকে, তার চেয়েও অনেক কম পর্যটকরে ঘুরতে দেখা যায়।

ঢাকা থেকে আসা হাসান আল-মামুন, জলি আক্তার,পলি বেগম বলেন, “ঈদের ছুটিতে ঘুরতে এসেছি কমলগঞ্জে। চা-বাগানে ঘুরলাম, লাউয়াছড়ায় গেলাম। লোকজন খুবই কম, অনেটা শান্তিতে ঘুরতে পেরেছি। পরিবার ও আত্বীয়সজন নিয়ে পর্যটনের রাজধানীতে এসে ভালো লাগল।” 

পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘এবার পর্যটক যে এত কম হবে, তা আমরা ভাবতে পারিনি। তাঁদের প্রস্ততি থাকলেও পর্যটক না থাকায় ব্যবসার ক্ষতি নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন। পর্যটক কম থাকায় এ ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট অনেকেই সংকটে পড়েছেন। পর্যটকদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান গাইডরা। কিন্তু পর্যটক একেবারেই না থাকায় তাঁদের মন ভালো নেই ‘

ট্যুর গাইড শাহিন আহমদ জানান, “এই সময়ে অনেক ট্যুর গাইডের প্রয়োজন পড়ে। আমরা পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়াই। এবার পর্যটকেরা নেই, আমরা সারা দিনেও পর্যটক পাইনি। খুবই কঠিন পরিস্থিতি আমাদের জন্য।”

কমলগঞ্জের অনেক হোটেল ও রিসোর্ট মালিকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, “এ ঈদে পর্যটন নাই বললে চলে। তারা জানায়,করোনা কালীন সময়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা কখনো পুরন করার মতো নায়। কিন্তু এবারের বন্যায় যে ক্ষতি আমাদের করে গেছে তা কিভাবে পুরন করবো এটাই ভাবছি আমরা।”

এদিকে শ্রীমঙ্গলের হোটেল প্যারাডাইস গেস্ট হাউসের মালিক ও প্রতিষ্ঠাতা আবুজার বাবলা বলেন, “ঈদ কিংবা বড় কোনো ছুটিতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এ সময় দেশবিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসবেন। পর্যটকের পদচারণে শ্রীমঙ্গলসহ পর্যটন এলাকা মুখরিত থাকে, তবে এ বছর চিত্রটা ভিন্ন। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার প্রভাবে এখানে পর্যটকের সংখ্যা নেই বললেই চলে।”

ফলে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক মন্দায় পরবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এই অপূরণীয় ক্ষতি যা কাটিয়ে ওঠা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ঈদকে সামনে রেখে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও পর্যটক না আসায় সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িতরা মনে করছেন

লাউয়াছড়া ইকো টুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া বলেন, “ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়াসহ সব পর্যটনকেন্দ্রে প্রচুর পর্যটকের আগমন হয়, কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। পর্যটক শূন্য বললেই চলে।”

কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্য (ওসি) ইয়াদৌস হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টীম সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটক নগরী কমলগঞ্জে প্রতিটি যায়গায় পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ঘুরতে থাকতে দেখা যায়।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জনবাণীকে জানান, “এ ঈদে অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম খুব কম। তবে ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে। এবারে বন্যার কারনে পর্যটকদের উপস্থিতি নাই বললেই চলে। তিনি আরোও বলেন, পর্যটক কম থাকলে কি হয়েছে ,আমাদের প্রস্তুতির কোন ঘাড়তি নেই। জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ করার জন্য পায়ে হাঁটার তিনটি ট্রেইল পথ রয়েছে। দর্শনার্থীরা এই ট্রেইল ঘুরেই চলে যান। এখানে গাইডরাও রয়েছে, এদের বলে দেওয়া হয়েছে যাতে পর্যটকরা এর বাইরে ও কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাতে বন ও পরিবেশের ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে। পর্যটকদের জন্য নিয়ন্ত্রিত ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কমলগঞ্জ থানা পুলিশ, পর্যটন পুলিশ ও সিএমসি সদস্যদের নিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও প্রকৃতি ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।”

এসএ/