কলম্বো বিপ্লব দক্ষিণ এশিয়ার জন্য সতর্ক বার্তা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
শ্রীলংকায় সংকটের সূত্রপাত কয়েক দশক আগে থেকেই দাতা দেশ ও সংস্থা গুলোর ঋণ পরিশোধে নিজের অক্ষমতা প্রকাশের পাশাপাশি শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্যের কোঠায়। খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও ঔষধ সংকট ছাড়াও বিদ্যুৎহীনতার মধ্যেই কাটছে দিনের বেশিরভাগ সময়।পরিস্থিতি এমন যে, বলা হচ্ছে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এমন সংকটে দেশটি আর কখনো পড়েনি।অথচ ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসানের পর প্রাণ ফিরে এসেছিলো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে, জমজমাট হয়ে উঠছিলো পর্যটনসহ সেবা খাত। তাহলে মাত্র দু বছরের কোভিড মহামারির পর এভাবে ভেঙে পড়লো কেন দেশটি?সেখানে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ইন্দ্রজিত কুমারস্বামী বলেছেন, শ্রীলংকার এ সংকট হুট করে জন্ম হয়নি বরং এ সংকটের উৎসের দিকে তাকাতে হলে অনেক আগে ফিরে যেতে হবে সেই পঞ্চাশের দশকে। তার মতে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে দেশটির অর্থনীতি কখনোই নিরাপদ থাকার মতো স্থিতিশীলতা পায়নি। গত কয়েক বছরে এর সাথে যোগ হয়েছে সরকারের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত। ২০১৯ সালের শেষ দিকে রাজাপক্ষে জনতুষ্টিমূলক কর কর্তনের পদক্ষেপ নেন। ফলে কোভিড মহামারির জেরে অর্থনীতিতে জোর ধাক্কা লাগার মাস কয়েক আগেই সরকারের রাজস্ব ব্যাপকভাবে কমে যায়। প্রবাসী শ্রীলঙ্কানদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও ভাটা পড়ে। ইতিমধ্যে করোনা মহামারি শুরুর পর প্রবাসীদের অনেকে চাকরিও খোয়ান।বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমার সঙ্গে সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে হিমশিম খেতে থাকে শ্রীলঙ্কা।এই ঋণের বড় অংশই ছিল উচ্চাভিলাষী অবকাঠামাগত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ। এমনকি ভারতের মতো প্রতিবেশীদের কাছেও দেনাদার হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির পর নিয়মিত অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হতে থাকে সরকার। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় ২০২১ সালে রাজাপক্ষের জৈব সারভিত্তিক চাষের সিদ্ধান্ত।
এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাসায়নিক সারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কৃষেকেরা। রাতারাতি এমন পদক্ষেপে দেখা যায়, চা ও ধান উৎপাদনে ধস নেমেছে। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে শ্রীলঙ্কা। তবে এ সংকট শুধু অর্থনীতিতে আটকে নেই। খাদ্যপণ্য থেকে জ্বালানির সংকটে ক্ষুব্ধ মানুষ সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন। জনরোষের মুখে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করলেও স্থিতাবস্থা আসেনি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। রাজাপক্ষে পরিবারের সদস্যমুক্ত সরকারের দাবিতে এখনো উত্তাল রাজপথ। শ্রীলঙ্কায় লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট এবং অসহনীয় বিদ্যুৎ ঘাটতির জেরে সৃষ্ট রাজপথের আন্দোলন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের ক্ষমতার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। তাঁর ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে অন্য মন্ত্রীদের নিয়ে এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটিতে নতুন নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীরা। রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি ও বিক্ষিপ্ত সহিংসতা দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটিয়ে ওঠা ও এরই মধ্যে কোডিভ-১৯ এর কারণে ব্যাপকভাবে ধাক্কা খাওয়া পর্যটননির্ভর অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের মতো বিষয় জটিল করে তুলেছে। শ্রীলঙ্কায় প্রাসাদ ছেড়ে সদ্য পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে একসময় সিংহলিরা ভালোবেসে ‘টারমিনেটর’ বলত। তামিলদের বিদ্রোহকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে গোতা এই ভালোবাসা পেয়েছিলেন। কিন্তু এক যুগ পর সেই টারমিনেটরকে চোরের মতো লুকিয়ে প্রাসাদ ছেড়ে পালাতে হলো। তার আগে মাহিন্দা ও বাছিলকেও তাড়িয়েছে জনতার চাপ। একে ইতিহাসের ট্র্যাজেডি বলা হবে-নাকি প্রহসন; সে বিষয়ে বিতর্ক চলছে এখন দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় বিতর্কের পাশাপাশি নতুন প্রশ্নও উঠেছে-সামনের রাজনৈতিক প্রশাসন কী আদল নেবে? ডলার ও জ্বালানি কোথা থেকে আসবে? কখন আসবে? তাড়ানোর মতো আর তো কোনো টার্গেট নেই।
কলম্বোতে ৯ জুলাইয়ের বিপ্লবের নেতৃত্ব কোনো বিরোধী দল দেয়নি। পাঁচ মাস ধরে সেখানে মাঝেমধ্যে বিরোধী দলগুলো রাজপথে টুকটাক নামলেও সর্বশেষ গণসুনামি শুধুই সাধারণ জনতার ডাকে হয়েছে। শ্রীলঙ্কার এই অভিজ্ঞতা হয়তো দক্ষিণ এশিয়ায় কর্তৃত্ববাদের হাতে ধুঁকতে থাকা অনেক দেশের নাগরিকদের ভাবাবে। পুরোনো রাজনৈতিক তাত্ত্বিকেরাও হয়তো তাঁদের ভাবনাচিন্তাগুলো আরেক দফা উল্টেপাল্টে দেখবেন। মধ্যবিত্ত যে এখনো নাগরিক অভ্যুত্থানের সামর্থ্য রাখে, সেটাই কলম্বোর ছাত্রছাত্রী আর আইনজীবী সংগঠন গুলো দেখাল। গত সপ্তাহেও এদের মিছিলে মাত্র কয়েক শ লোক হতো। কিন্তু এরা কেউ মাঠ ছেড়ে যায়নি। শেষ পর্যন্ত জনতাকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢোকাতে পেরেছে তারা।প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার মতোই প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমেসিংহকেও হয়তো বিদায় নিতে হবে শিগগিরই। তাঁর শক্তির উৎস রাজাপক্ষে। তাদের উৎপাটনে তাঁরও পায়ের তলায় মাটি সরে গেছে। গোতাবায়া খলনায়ক হিসেবে বিদায় নিয়েছেন। রনিল সেই মর্যাদাও পাবেন না। গোতা পলাতক অবস্থা থেকে পদত্যাগপত্র পাঠালে সম্ভাব্য নেতা হিসেবে আসতে পারেন প্রধান বিরোধী দল ‘সঙ্গী জন বালাওয়েগা’র সজিথ প্রেমাদাসা, সাবেক সেনাপ্রধান শরৎ ফনসেকা এবং জেভিপির অনুঢ়া কুমার দেশনায়েকে প্রমুখ। এঁদের বাইরের কেউও প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। পার্লামেন্টের স্পিকারের নামও ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে আসছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও লাগবে কাউকে। তবে সব ক্ষেত্রে জেভিপি ও সঙ্গী জন বালাওয়েগার সমর্থন লাগবে। কারণ, জনতার কাছে এখন কেবল এই দুই রাজনৈতিক দলের কিছু প্রভাব রয়েছে। তবে নতুন সরকারের জন্য এদের চেয়েও জরুরি হলো সেই ছাত্র-তরুণদের সম্মতি, যারা গত পাঁচ মাস রাজপথে পড়ে ছিল রাজাপক্ষেদের তাড়াতে। নতুন সরকারকে তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতেই হবে। না হলে তারা আবার রাস্তায় নামবে। এই তারুণ্য চাইছে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ। তারা রাজাপক্ষেদের পাচারকৃত সম্পদ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে রেখেছে। সর্বোপরি তারা দেশটির এত দিনকার চমক দেখানো উন্নয়ন-রাজনীতির বদলও চাইছে।
এর মধ্যে প্রথমটা যে অর্জিত হবে, সেটা নিশ্চিত। এতে শ্রীলঙ্কার সমাজে তামিলদের কথা বলার রাজনৈতিক পরিসর খানিকটা বাড়বে। সিংহলি সমাজেও গণতান্ত্রিক আবহ বাড়তি জোর পাবে। গোতাবায়ার পলায়ন এবং রনিল বিক্রমাসিংহের সম্ভাব্য বিদায় চীন ও ভারত-উভয়ের জন্য বিমর্ষ হওয়ার মতোই ঘটনা। প্রথমজনকে চীন অনেক মদদ দিয়েছিল এবং দ্বিতীয়জনকে বহুকাল নয়াদিল্লি শক্তি জুগিয়ে যাচ্ছে। এঁরা উভয়ে সিংহলি কুলীন রাজনীতির দুই প্রতিভূ। ৯ জুলাই এই কুলীনতন্ত্রকে বাঁচাতে পারেনি সিংহলি সামরিক-আমলাতন্ত্র। এর ব্যাখ্যা খুব সহজ এবং স্পষ্ট: জনতা জেগে উঠলে কোনো বুদ্ধিমান সামরিক বাহিনী গুলি চালানোর ঝুঁকি নেয় না। শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী অতি পরিণত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে ৯ জুলাই প্রেসিডেন্টকে পালাতে দিয়ে বা লুকিয়ে ফেলে। এর বিকল্প হতো চরম রক্তপাত। সিংহলি সামরিক আমলাতন্ত্র দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নিজেকে রক্ষা করল এবং ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখল। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি যে উগ্র জাতীয়তাবাদ, সেই পাটাতন অনেকখানি সরে গেছে। ৯ জুলাইয়ের আগের এবং পরের শ্রীলঙ্কা অবশ্যই আর আগের মতো থাকবে না। সিংহলি তরুণ-তরুণীরা ইতিমধ্যে এই উপলব্ধির প্রকাশ ঘটিয়েছে-গৃহযুদ্ধকালে তামিলদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। নতুন সরকার অবশ্যই সামরিক বাহিনী থেকে রাজা পক্ষেদের বশংবদ কর্মকর্তাদের সরাবে এখন। এটা না হলে এবং তাৎক্ষণিকভাবে না হলে বিপ্লব অনেকখানি অপূর্ণ থেকে যাবে। তামিলরা তাদের প্রতি ঘটে যাওয়া যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিও তুলবে নতুন করে। আমেরিকা ও ইউরোপের জোরালো সমর্থন থাকবে তাতে। গোতাবায়ার একসময় আমেরিকার নাগরিকত্ব থাকলেও তাঁর সরকার নিয়ে পাশ্চাত্য অখুশি ছিল। পালানোর আগের দিন হাস্যকরভাবে পুতিনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ করে হয়তো গোতা নিজের রাজনৈতিক আয়ু আরও কমিয়ে ফেলেছিলেন। তবে আমেরিকাকে এখন সম্ভাব্য সরকারের পেছনে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে।
যদি সে রকম কোনো সরকার শ্রীলঙ্কার পরিবর্তনবাদী মানুষ শিগগিরই গঠন করতে পারে। প্রেসিডেন্টকে তাড়ানোর উল্লাস শেষ হলেই শ্রীলঙ্কার প্রত্যেক নাগরিকের জন্য দুঃখজনক এবং নির্মম এক অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে।বলা বাহুল্য, বিপুল সহায়তা দরকার দেশটির। ভারত ও চীন নতুন সরকারকে সামান্যই সহানুভূতি দেখাবে এখন। ইউরোপ-আমেরিকাই এ রকম একটা সরকারের জন্য একমাত্র হাত পাতার জায়গা হতে পারে। ওয়াশিংটনের সবুজসংকেত পেলে আইএমএফ এবার তার প্যাকেজ নিয়ে হাজির হতে পারে। পাকিস্তানে নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে আইএমএফের সঙ্গে সফলভাবে চুক্তি হয়ে দেশটিকে দম নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ইমরানের পতন এই চুক্তিকে ত্বরান্বিত করেছে। গোতার নির্বাসনও শ্রীলঙ্কার জন্য সেই রাস্তাই হয়তো সুগম করবে। তবে এও সত্য যে আইএমএফের অর্থনৈতিক সংস্কার প্রস্তাবে নাগরিক জীবনের জন্য কষ্টকর এক অধ্যায়ের অনিবার্যতা আছে-কিন্তু আজ থেকে ঘুম ভাঙার পর শ্রীলঙ্কার কাউকে ব্যর্থ পরিবারতন্ত্রের ঔদ্ধত্য অন্তত আর দেখতে হবে না। আপাত-দুঃখী জীবনে এই সুখটুকু তারা একান্তই নিজস্ব এক রাজনৈতিক সংগ্রামে কিনতে পারল শনিবার। গত ছয় মাসে এই প্রথম একটা দেশে সবাই মিলে উল্লাস করতে পারল। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে নাগরিক জাগরণের এই কৃতিত্ব দারুণ ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবেই লিখা থাকবে।শ্রীলঙ্কাজুড়ে আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে পরবর্তী প্রশাসনিক নেতৃত্ব। দেশটিতে ক্ষমতার উৎস প্রেসিডেন্ট। সেই পদে কে আসবে এবং তিনি ধ্বংসের কিনার থেকে দেশকে কীভাবে বাঁচাবেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সুদের হার বাড়িয়ে দেয়, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটায় ও অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আমদানিতে লাগাম টেনে ধরে। কিন্তু ২০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার নিয়ে চলতি বছরের মধ্যে ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করে অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য লড়াই-ই বটে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে সংঘাত-সহিংসতায় নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এই দ্বীপরাষ্ট্রটিকে।
২০১৯ সালে ইস্টার সানডেতে বোমা হামলার আগপর্যন্ত দেশটিতে কোনো ধরনের অশান্তি সেভাবে দানা বাঁধেনি। আত্মঘাতী এই বোমা হামলায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হন। সরকার এ জন্য অনেকটাই অপরিচিত একটি গোষ্ঠীকে দায়ী করে। এর কয়েক মাস পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে ভোট দেন জনগণ। সাবেক সেনা কর্মকর্তা রাজাপক্ষেকে অনেকে গৃহযুদ্ধের সময়কার নায়ক হিসেবে দেখেন। অন্যদিকে দেশটির ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নে প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চীন। তবে মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও মন্ত্রিসভায় থাকা তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা বেইজিংয়ের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। নীতিনির্ধারকেরা সুদ পরিশোধের ব্যাপারে তৎপর হন এবং সহযোগিতা পেতে ভারতের দিকেও হাত বাড়ান। এরই মধ্যে ১২ এপ্রিল শ্রীলঙ্কা নিজের দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বিষয়ে তার ঋণদাতাদের সতর্ক ও কিছু বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের কিস্তি স্থগিত করে।অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, সহায়তার জন্য তহবিল পেতে আইএমএফের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা শুরু করা হবে। তবে মে মাসের প্রথমার্ধে তখনকার অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি পার্লামেন্টে বলেন, বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকা এখন নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন সর্বগ্রাস দুর্নীতি আর ধারাবাহিক অর্থণৈতিক অব্যবস্থাপনায় দেশটিকে তিলে তিলে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে এসেছিলো।যদিও তিন বছর আগেও সবার ধারণা ছিলো যে শতভাগ শিক্ষিত মানুষের এ দেশটির অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং এর মূল ভিত্তি ছিলো পর্যটন থেকে আসা আয় যা ক্রমশ বাড়ছিলো আর রেমিটেন্স।বাস্তবতা হলো সেই শ্রীলংকা এখন ধুঁকছে অর্থনৈতিক সংকট আর রাজনৈতিক সহিংসতায় এবং টিকে থাকার জন্য আপ্রাণ লড়ছে দেশটির অর্থনীতি। যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে রাজাপাকশা সরকারের একের পর এক ভুল নীতি, দুর্নীতি আর আর্থিক অব্যবস্থাপনাকে।
লেখক:রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট।
এসএ/