হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য বাড়াতে ‘একশ’ কোটি টাকায় প্রকল্প গ্রহণ
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি। ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর আয়তনের এই হাওরের অবস্থান সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৫টি উপজেলাজুড়ে। বর্ষা ও শীতে এই হাওর রূপ বদলায়। প্রকৃতিও এখানে ধরা দেয় নানারূপে। হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে এখানে প্রতিবছর ছুটে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে হাকালুকির গায়ে এখনো লাগেনি পর্যটনকেন্দ্রের তকমা। এবার হাকালুকির পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হাতে নেওয়া হয়েছে শত কোটি টাকার প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হাকালুকি হাওর স্বীকৃতি পাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে। এতে স্থানীয় মানুষের জীবনমান ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব জনবাণীকে জানান, হাকালুকি হাওরের ফেঞ্চুগঞ্জ অংশকে পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষে ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে হাওরের সৌন্দর্য বাড়াতে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে, হাওড় এলাকায় বোরো ফসল রক্ষার্থে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পর্যটক আকর্ষণে ঢাকার হাতিরঝিলের মতো আর্চ ব্রিজ নির্মাণ। এছাড়া পর্যটকদের বসার জন্য বেঞ্চ, শিশুদের জন্য দোলনাসহ বিভিন্ন রকমের রাইড হাওরপাড়ে বসানো হবে।
এমপি হাবিব জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম সিলেট সফরে আসলে হাকালুকি হাওরকে পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরে সহযোগিতা চান। তখন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী সহযোগিতার আশ্বা দেন। এমপি হাবিব জানান, ইতোমধ্যে পর্যটনকেন্দ্রের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। প্রকৌশলীরা এলাকা ঘুরে এসে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা শুরু করেছেন।
বর্ষায় হাকালুকি রূপ নেয় সাগরে। হাওরের অথৈ জলরাশির বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে পাড়ে। উত্তাল সেই হাওরে নৌকা ও টুরিস্ট লঞ্চ নিয়ে ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা। ওয়াচটাওয়ারে চড়ে হাকালুকির রূপ-সৌন্দর্য্যে চোখ বুলানোর চেষ্টা করেন পর্যটকরা। শীতে অন্য রূপের দেখা মিলে হাকালুকিতে। বর্ষায় যে হাওরে থাকে অথৈ জল, শীতে সেটা হয়ে ওঠে ফসলী মাঠ। হলুদ সর্ষে ক্ষেত বা সোনালী বুরো ধানে অন্য হাকালুকির দেখা মিলে। হাকালুকির হাওরজুড়ে রয়েছে ২৪০টি ছোট-বড় বিল। শীতকালে এসব বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে নামে অতিথি পাখি। তখন অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মূখর হয়ে ওঠে নির্জন হাকালুকি।
হাকালুকি হাওরে ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪১৭ প্রজাতির পাখি, এর মধ্যে ১১২ প্রজাতির অতিথি পাখি ও ৩০৫ প্রজাতির দেশীয় পাখি রয়েছে, ১৪১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ১০৭ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের কীট-পতঙ্গ, জলজ ও স্থলজ ক্ষুদ্র অনুজীব। হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সংরক্ষিত একটি জলাভূমি। যা দেশের অন্যতম মাদার ফিশারিজ।
হাকালুকিকে ঘিরে সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৫ উপজেলায় ব্যাপক পর্যটন সম্ভাবনা থাকলে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এবার সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই শত কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব।
এদিকে, মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হাকালুকি হাওরকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। হাওরের উন্নয়নের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায় শিগগিরই হাকালুকি হাওরের উন্নয়ন হবে।
এসএ/