হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্পের ঐতিহ্য


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্পের ঐতিহ্য

কালের বিবর্তন ও আধুনিকতার ছোয়ায় ইট পাথরের তৈরী শহর তথা গ্রামের ঐতিহ্যে থেকেও হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্পের নান্দনিকতা। এক সময়কার লোক জীবনের খুব কম পরিবার ছিল যেখানে বাশেঁর তৈরী সামগ্রী ব্যবহৃত ছিলনা। তবে বর্তমানে প্লাস্টিক পন্যের সহজলভ্যতা ও ব্যবহারে আরামদায়ক হওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ দিয়ে তৈরী শিল্প সামগ্রী।ফলস্বরূপ এ লোকশিল্পের সাথে জরিত কারিগররা রয়েছেন বিপাকে ।

জানা যায়, উৎপাদন, পুঁজি, উদ্যোগ ও পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় পেশা পরিবর্তন করেছেন বাশঁ-বেত শিল্পের কারিগররা। ধাতব ও প্লাষ্টিক পণ্যের কবলে পড়ে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাচীনতম শিল্পটি ক্রমশমুখ থুবড়ে পড়ছে। কালের আর্বতনে, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ট পোষকতার অভাবে অনেকেই এ পেশা ছেড়েছেন বহু আগেই। মানুষ বাড়ার সাথে সাথে বন-জঙ্গল উজাড়, বাঁশের দাম কম। যার ফলে ঐতিহ্যবাহী শিল্পটির চরম দুর্দিন চলছে। তবে দুর্দিন কাটিয়ে এ শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে নেই কোন সরকারি উদ্যোগ।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্লাস্টিক পণ্যের দাপটে কদর কমেছে বাঁশ-শিল্পের সামগ্রীর। বাশঁ শিল্প একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। সাধারণত গ্রামীণ সমাজের লোকেরাই বাঁশ-বেতশিল্পের সাথে জড়িত।পৌরশহর ও গ্রামের অলিতে-গলিতে দাপিয়ে বেড়ানো প্লাস্টিক পন্যের কারনে বাঁশ দিয়ে তৈরী শিল্পসামগ্রীর চাহিদাও কমে গেছে।এখন বাজারে দাপটের সাথে ব্যবসা করছে প্লাস্টিক পন্য। কিন্তু এক সময় বাশেঁর পন্যেই ছিল ব্যবহারের একমাত্র সম্বল। এ হস্ত শিল্পের ব্যবহার তেমন না হলেও এ যুগেও তা ধরে রেখেছে গুটিকয়েক পৌর বাজারের কয়েকটি দোকান। ভাল বিক্রি না হলেও ধরে রেখেছে গ্রামীন লোক শিল্পের ঐতিহ্য। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ত্রিশাল সুতিয়া নদীর পাশ ঘেষেঁই গত ২৫ বছর ধরে বাঁশ দিয়ে তৈরী শিল্প সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। দোকানের মালিক সংখ্যা একাধিকবার পরির্বতন হলেও স্থানের নেই কোন পরির্বতন। বাশেঁর তৈরী হরেক রকম পন্যে সাজানো দোকান দেখে মনে হবে মনমুগ্ধকর পরিবেশ। যেন ফুল দিয়ে সাজানো বাগানে পাহারা দিচ্ছেন মালি।তবে ক্রেতার সংখ্যা তেমন নেই বলেলেই চলে। দোকানে সাজানো আছে বাশঁ-বেত দিয়ে তৈরী বিভিন্ন পন্য সামগ্রী। 

সুতিয়া নদীর ব্রীজ সংলগ্ন বাশেঁর পন্য বিক্রেতা নাজির হোসেন জানান, “আদি পেশা হিসেবে এখনো বাশঁ-বেত শিল্পের ব্যবসা ধরে রেখেছি।তবে এখন আর আগের মত চাহিদা নেই গ্রাহকদের। এক সময় বাঁশের তৈরী পন্যের অনেক চাহিদা ছিল। প্লাস্টিক এসে ব্যবসা নষ্ট করে দিয়েছে।বেশ কিছুদিন আগেও আমাদেও উপজেলার কারিগরদের তৈরী করা জিনিস বিক্রি করতাম। তারা আর আগের মত তৈরী করেনা তাই বাহির থেকে কিনে বিক্রি করি। ফুলবাড়ীয়া, মুক্তাগাছা,ইশ্বরগঞ্জ,কিশোরগঞ্জ থেকে পন্য সংগ্রহ করে পাইকার আমাদের কাছে নিয়ে আসে। বাশেঁর পন্যের কেনার জন্য এখনো অনেকেই আসেন কিন্তু আগের চেয়ে কম। সব জিনিসের দাম বাড়লেও এটার দাম তুলনামূলক কম। প্লাস্টিকের পন্যে বাজার ভরে গেছে । আল্লাহর রহমতে যে টুকু বিক্রি হয় কোন রকম চলে যাচ্ছি। এ ব্যবসা থেকেই আমার পুরো সংসার চলে।”

বাজার ঘুরে দেখা যায়, পণ্যের দাম যথাক্রমে খাদা ১০০-২৫০ টাকা, উড়ি ৫০ টাকা, সেড় ৩০ টাকা, মাথাল ১০০-২০০ টাকা, ডালা  ৬০-১০০ টাকা, তালের পাখাঁ ৩০-৮০ টাকা,চাটাই ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, কুলা ১০০-১৩০ টাকা, চালুন ৮০- ১৫০ টাকা, খাঁচা ১০০-৩০০ টাকা, মাচা ১৫০-৩০০ টাকা, মাছধরাবাইড় ১০০- ৫০০ টাকা, মই ২০০-৫০০ টাকা, ঠুয়া ৫০-১০০ টাকা, টুকরী ৫০-৮০ টাকা, , পাটি ৮০-১০০০ টাকা, খালই ৫০-১০০ টাকা,ঝাড়ু ৬০-১০০ টাকায় সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী খুচরা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। 

বাশেঁর পন্য সংগ্রহের পাইকার সফর হায়দার,করিম হাজারী ও খালেক বেপারী জানান, ‍“আমরা বিভিন্ন এলাকার কারিগরের কাছ থেকে পন্য সংগ্রহ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সাপ্লায় দিয়ে থাকি। বাশঁ আগের মত পাওয়া যায়না। তাই বাশেঁর দাম বেশী ও মুজুরী বেশী হওয়ায় পন্যের দামও একটু বেড়েছে। প্লাস্টিকের পন্যের কারনে একটু চাহিদা কম । চাহিদা কম থাকায় এসব পন্যের কারিগররা অন্য পেশায় চলে গেছে। প্রত্যন্ত গ্রামে কিছু লোক তৈরী কওে আমরা ঐখান থেকে সংগ্রহ করি।”

এসএ/