তিন ‘সুযোগের’ দুয়ার খুলছে চট্টগ্রাম বন্দরে


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


তিন ‘সুযোগের’ দুয়ার খুলছে চট্টগ্রাম বন্দরে

একসঙ্গে তিন ‘সুযোগের’ দুয়ার খুলছে চট্টগ্রাম বন্দরের এক কনটেইনার টার্মিনালেই। নতুন এই কনটেইনার টার্মিনালটি চালু হলে বন্দরের মূল জেটিতে জাহাজ ভেড়ার ক্ষেত্রে কমবে দূরত্ব। বিপজ্জনক বাঁক পেরুনোর ‘ঝক্কি’ এড়ানো যাবে অনেকখানি। একইসঙ্গে আগের চেয়ে তুলনামূলক বড় জাহাজ সহজেই ভিড়তে পারবে বন্দরে।

একের মধ্যে তিন, সম্ভাবনার নতুন দ্বার খোলা চট্টগ্রাম বন্দরের ‘নতুন এই সংযোজনের’ নাম পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। বর্তমানে আনুষ্ঠানিক ‘যাত্রা শুরু’র অপেক্ষায় আছে টার্মিনালটি। তবে সেই অপেক্ষাও আর খুব বেশি দিনের নয়। চলতি সপ্তাহেই পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো বাল্ক জাহাজ ভিড়বে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি)।

জানা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে জাহাজ ভিড়তে কর্ণফুলীর মোহনা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার ভিতরে আসতে হয়। এরমধ্যে পার হতে হয় বিপজ্জনক বাঁকও। সেই বাঁকের ‘ঝক্কি’ এড়িয়ে, দূরত্ব ছয় কিলোমিটার কমিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) প্রথমবারের মতো বাল্ক জাহাজ ভিড়বে পিসিটিতে। চট্টগ্রাম বন্দরের ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ টার্মিনাল জেটিতে জাহাজের ড্রাফট আগের চেয়ে আরও ১ মিটার বেশি থাকছে। ফলে ভিড়তে পারবে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। যার ফলশ্রুতিতে অপেক্ষাকৃত বড় জাহাজের চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কম সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে আরও জানা যায়, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পিসিটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কাজটির দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি ইউনিটকে। প্রকল্পটি আরও আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে কাজের গতি কমে যায়। যে কারণে নির্মাণকাজ শেষের সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানো হয়। যদিও পিসিটি অপারেশনের দায়িত্ব এখনও কাউকে দেওয়া হয়নি। 

এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত চারটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নাম শোনা গেলেও এখনও কোনো প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়নি। পিপিপির আওতায় প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত হওয়ার আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পিসিটি পরিচালনা করবে। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষের ইকুইপমেন্ট বহরে থাকা অতিরিক্ত রাবার ট্রায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন, রিচ স্টেকার, ফর্ক লিফটসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে ব্যবহৃত হবে। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সচিব ওমর ফারুক বলেন, চারটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হলেও এখনও কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কাউকে দায়িত্ব না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। তবে সরকার ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে পরিচালনা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর অপারেশনের দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠান পাবে সেই প্রতিষ্ঠানই টার্মিনালটি পরিচালনার সব ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করবে।  পরীক্ষামূলক অপারেশনে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২১ জুলাই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) জেটিতে জাহাজ ভিড়তে যাচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে বাল্ক জাহাজ (খোলা পণ্যবাহী জাহাজ) ভিড়লেও পর্যায়ক্রমে গিয়ারড জাহাজ (নিজস্ব ক্রেনযুক্ত জাহাজ) অগ্রাধিকার পাবে পিসিটিতে। তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে পিসিটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে পারে।

পিসিটি এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালের প্রবেশমুখে শ্রমিকরা ফিনিশিংয়ের (গোছানো) কাজ করছেন। ইতোমধ্যে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য জেটি প্রস্তুত থাকলেও ইয়ার্ডের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তারপরও আগামী ২১ জুলাই জাহাজ ভেড়ানোর কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন দপ্তরকে সার্বিক প্রস্তুতি রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার জনবাণীকে বলেন, ‍“আমাদের কাজ প্রায় শেষ। এখন টুকটাক কিছু ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। আগামী ২১ তারিখ পরীক্ষামূলক অপারেশনে একটি বাল্ক জাহাজ ভিড়বে। কনটেইনার হ্যান্ডেলিং দুপুরের দিকে শুরু হবে। আমাদের (চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ) চেয়ারম্যান মহোদয় নিজে বসে পিসিটির কার্যক্রম দেখবেন। ওই দিন আমরা পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রসঙ্গে লিখিত একটি ব্রিফ আপনাদের দিব। সেখান থেকে আপনারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন।”

পিসিটি চালু প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জনবাণীকে বলেন, “পরীক্ষামূলকভাবে বাল্ক জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে ইয়ার্ডের কার্যক্রম চালু করা হবে। পরবর্তীতে কনটেইনারবাহী জাহাজও ভেড়ানো হবে। পিসিটি অপারেশনে কাউকে নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এটি পরিচালনা করবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ইকুইপমেন্টের পাশাপাশি জাহাজের ক্রেন দিয়ে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং করা হবে। তাই সমস্যা হবে না। তবে এক্ষেত্রে গিয়ারড জাহাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পিসিটিতে ভেড়ানোর সুযোগ পাবে।”

এসএ/