রাজনীতি নাকি সন্ত্রাসের ভাষা?

রাজনীতি একসময় ছিল মানুষের আশা ও পরিবর্তনের নাম। রাজনীতি মানে ছিল ত্যাগ, সহনশীলতা, যুক্তি ও জনগণের পাশে থাকা। কিন্তু আজ যেন শব্দগুলো বদলে গেছে। আমরা শুনছি এমন সব ভাষা, যা রাজনীতির নয়, বরং ভয় আর সহিংসতার ভাষা।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় এক দৈনিকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পঞ্চগড়ে এক জনসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারজিস আলম বলেছেন, “নেসকোর যে মালিক তাকে এবং তার বাপকে জবাব দিতে হবে… তাদের কলিজা ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে রাখব।”
একজন রাজনৈতিক সংগঠকের মুখে এমন হুমকি শুনে প্রশ্ন জাগে—এ কি রাজনীতির ভাষা, নাকি সন্ত্রাসের?
তবে একটু ভাবুন, নেসকো কোনো ব্যক্তির বাপের সম্পত্তি নয়। এটি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, যার মালিক আমরা- বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।
বিজ্ঞাপন
পঞ্চগড়ের মতো সীমান্তঘেঁষা জেলায় বিদ্যুৎ যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে- প্রযুক্তিগত ত্রুটি, লাইন ফল্ট, অতিবৃষ্টি কিংবা আকস্মিক লোডশেডিং। বিদ্যুৎ কি শুধু এনসিপির সভার সময়ই যায়? অন্য কারও সভার সময়, বাড়িতে, কারখানায় কিংবা সরকারি দপ্তরে বিদ্যুৎ যায় না? সচিবালয়ের বৈঠকেও কখনো কখনো বিদ্যুৎ চলে যায়- যেখানে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব নিজেই উপস্থিত থাকেন! মাঝে-মাঝে বিদ্যুৎ গুলশান-ধানমন্ডিতে যেতে ও আমরা দেখেছি।
তাহলে প্রশ্ন জাগে—বিদ্যুৎ গেলেই কি এখন কারও ‘কলিজা ছিঁড়ে ফেলতে’ হবে? যে নেতা এমন কথা বলেন, তিনি কি সত্যিই জনগণের কলিজা ছিঁড়ে ফেলতে চান, নাকি জনসেবার নামে রাজনীতিকে খেলার মাঠ বানাতে চান?
তিনি কি আদৌ রাজনৈতিক মতাদর্শে শিক্ষিত মানুষ, নাকি কেবল কণ্ঠস্বর উঁচু করার অনুশীলনেই পারদর্শী? তার রাজনৈতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কতটুকু, বয়সে কতটা প্রজ্ঞা অর্জন করেছেন- এসব এখন আমরা সাধারণ মানুষ কে ভাবতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এ সমস্ত সংলাপ তো নাটক বা সিনেমাতেও যায় না। কারণ, সিনেমার খলনায়কও জানেন সংলাপে সীমা রাখতে হয়, মঞ্চে বা সিনেমার পর্দায় সংযম দেখাতে হয়।কিন্তু বাস্তবের রাজনীতি আজ যেন সেই সীমা ভেঙে ফেলেছে। এখন প্রতিটি রাজনৈতিক মঞ্চই যেন একেকটা থ্রিলার দৃশ্য, আর প্রতিটি বক্তব্য একেকটা ভয়াবহ সংলাপ। ফারাক একটাই- সিনেমার শেষে দর্শক উঠে যায়, আলো জ্বলে, পর্দা নামে। কিন্তু বাস্তবের এই কাহিনির ক্ষত নিয়ে বাঁচতে হয় পুরো জাতিকে।
আমরা জাতি হিসেবে কবে এমন রাজনীতিবিদ পাব, যাঁরা সহনশীলতার পরিচয় দেবেন?
কবে নাগাদ জনগণ রাজনীতিবিদদের “চোর” বা “লুটেরা” বলে গাল দেবে না?
বিজ্ঞাপন
সাম্প্রতিক সময়ে এনসিপির অনেক নেতা নিজেরাই নানা বিতর্ক ও অনৈতিক ঘটনায় জড়িয়েছেন- এ অবস্থায় অন্যকে হুমকি
দেওয়ার নৈতিক অবস্থানই বা কোথায়?
রাজনীতিবিদদের আচার-আচরণে, ভাষায় ও মনে পরিবর্তন আনতেই হবে। কারণ, রাজনীতি যদি মানুষকে ভয় দেখায়,
বিজ্ঞাপন
তবে মানুষ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর যখন মানুষ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন রাজনীতি হারায় তার আত্মা।
যে রাজনীতি একদিন মানুষের মুক্তির পথ দেখিয়েছিল, সেই রাজনীতিই আজ নিজের ভাষায় বন্দি হয়ে পড়েছে। সময় এসেছে—ভয় নয়, বিশ্বাস ফেরানোর। রাজনীতিকে আবার মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনার। যেখানে নেতা মানুষের কলিজা ছিঁড়ে ফেলবে না, বরং মানুষের হৃদয় জয় করবে।
লেখক: পারভেজ আবীর চৌধুরী
বিজ্ঞাপন