গেস্ট-গণরুম মুক্ত হল চায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৪৬ পিএম, ২৭শে আগস্ট ২০২৪


গেস্ট-গণরুম মুক্ত হল চায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রতিনিধি

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও উপমহাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হলো ঢাকা কলেজ। ১৯৪৮ থেকে শুরু করে ২০২৪ দেশের প্রতিটি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছে ঢাকা কলেজ। ঢাকা কলেজের ইতিহাসের সাথে জড়িত রয়েছে ছাত্র-রাজনীতি। তবে কালের বিবর্তনে এসব ছাত্র-রাজনীতি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পরিবেশ নষ্ট করেছে বলে জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 


জানা যায়, ঢাকা কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগে থেকেই প্রায় একযুগ ধরে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন। সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি করেছে ছাত্রলীগ। ঢাকা কলেজের হলগুলোকে বলা হতো ছাত্রলীগের ক্যান্টনমেন্ট । প্রোগ্রাম, গেস্ট রুম এবং গণরুম শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অন্যতম হাতিয়ার ছিল। কোটা আন্দোলনের জের ধরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তার পরপরই হলগুলো থেকে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 


আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত


তাই এবার নোংরা রাজনীতি বন্ধ করে বৈধভাবে হলে সিট বরাদ্দ, গনরুম, গেস্টরুম মুক্ত হল চায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা।


এদিকে শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়ে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে সিট বরাদ্দ দিচ্ছে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলগুলোতে নোংরা রাজনীতি থাকার কারণে আমরা ভয়ে হলগুলোতে উঠতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে নিয়ে মারধর, নির্যাতন করা হতো যার ভয় আমাদের মাঝে সবসময় কাজ করতো। এখন আমরা নতুন এক স্বাধীনতা পেয়েছি, আমরাও আমাদের ক্যাম্পাসকে, হলগুলোকে লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতিমুক্ত রাখতে চাই।


মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে অসিত হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন,  আমি ১ম বর্ষ থেকেই হলে উঠতে চেয়েছিলাম। তবে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিলাম এক সাথে একরুমে অনেকজন থাকে, নেতাদের প্রোগ্রামে না গেলে মারধর করে ,তাদের কথা না শুনলে হলে থাকা যাবে না। তাই আর্থিকভাবে সমস্যায় থাকার পরও ভয়ে হলে উঠতে পারে নি। তবে, এখন রাজনীতি নাই, ভয় নাই, মেধার ভিত্তিতে সিট দিচ্ছে সেহেতু সুযোগ পেয়েছি আবেদন করেছি সিটের জন্য বাকিটা দেখা যাক।


আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের চোখে আগামীর ঢাকা কলেজ



খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ একযুগ ধরে হলগুলোতে একক আধিপত্য ছিল ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের। অবৈধভাবে সিট দখল করে, গেস্টরুমের নামে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনসহ চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত ছিল তারা। কেউ রাজনীতির প্রোগ্রামে না গেলে গেস্টরুমে ডেকে মারধর-নির্যাতন করতো ছাত্রলীগ।


গেস্টরুমের বিষয়ে জানতে চাইলে রকি আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি প্রথম এক বছর হলে ছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে আমাকে হল ছাড়তে বাধ্য করেছে আমার হলের নেতারা। একটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল আর তার মধ্যে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ছিল তার পরের দিন। আমি রিডিং রুমে পড়ছিলাম হঠাৎ আমার বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে বলে বড় ভাই ডাকতেছে তোরে তাড়াতাড়ি গেস্টরুমে আয়। তারপর আমি যাওয়ার পরপরই আমার বাবা-মা তুলে গালিগালাজ শুরু করেন ঐ হলের সিনিয়র নেতা। পরে বলে পরীক্ষা তাই কি? সামনে কমিটি আজ রাতে ঢাবিতে যেতে হবে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। সেদিন ফিরে এসে পড়তে পারেনি। পরদিনের পরীক্ষাটা খারাপ হয়েছিল। পরবর্তীতে আমি হল ছেড়ে দিয়েছিলাম। 


গেস্টরুম মুক্ত চেয়ে ঐ শিক্ষার্থী বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, হলগুলো দখলমুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসবাহিনীর হাত থেকে। আমরা এসব গেস্টরুম চাই না, আমরা যেন হলগুলোতে সুন্দরভাবে পড়তে পারি, থাকতে পারি এটার ব্যবস্থা করা হোক।  


‘গেস্টরুম কালচার’ কথা উল্লেখ এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রহমতুল্লাহ রাজন বলেন, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমল থেকে আমরা দেখে আসছি শুধু ঢাকা কলেজ নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হলে একটা নতুন কালচার তৈরি হয়েছিলো,সেটা হচ্ছে ‘গেস্টরুম কালচার’। এর পাশাপাশি ১ম,২য় এমনকি ৩য় বর্ষ এর ছাত্রগুলোও বৈধভাবে হলে সিট পায় না। হলে সিট না পাওয়ার জন্য গণরুম কালচার অর্থাৎ দেখা গেছে যে একেকটা রুমে ৩০,৩৫ জন করে থাকতে হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে ঢাকা কলেজের এখনকার যে ‘ ছাত্র- শিক্ষক’ প্রসাশনটা গড়ে উঠতে যাচ্ছে  এবং সেখানে মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টনের একটা প্রক্রিয়া চলছে।


হলের সিটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ঢাকা কলেজে প্রায় ১২ বছর যাবত আছি, এতোটা সময়ে  কখনো দেখিনি একটা বিভাগ থেকে ছাত্রদেরকে নমিনেশন দিচ্ছে যে এই এই ছাত্রগুলো হলে উঠতে পারবে এই বিষয়টি কখনোই দেখিনি।


বরং আমরা দেখেছি হল প্রশাসন ছিলো ঠিকই কিন্তু উনারা সিট বন্টণের কোনো নীতিমালা বা ভূমিকাই রাখতো না কোনো ছাত্রকে হলে ডুকানো বা বের করার ক্ষেত্রে।  যার কারণে কারণে দেখা যেতো যেসব হলে ১১৬ জন বা ২০০ জন ছাত্রের আসন বরাদ্দ সেখানে কখনো কখনো ৭০০, ৮০০ এমনকি ১০০০ উপরের ছাত্রসংখ্যা দাঁড়িয়েছে। 


আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজের হল থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ নানা মাদক দ্রব্য উদ্ধার


এই যে কালচার টা, যেখানে না ছিলো কোনো পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ না ছিলো অন্যান্য সুযোগ।  কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে ছাত্র রা পালা করে ঘুমোচ্ছে। যেমন,  একজন ১২ টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারলে আরেকজন তাকে ডেকে সেই বেড এ শুতে হচ্ছে। এই যে একটা পরিবেশ সেখান থেকে একটা ছেলে কি শিখবে??


সেই জায়গা থেকে এবার যে মেধাভিত্তিক সেট বণ্টনের প্রক্রিয়াটা করার চেষ্টা হচ্ছে সেখানে আমি মনে করি সব রকমের অপসংস্কৃতি অর্থাৎ যে কালচারের কথা বললাম, সেটা কোনো কালচার ই ছিলো না,নিন্দনীয় কালচার যাকে বলে, এই অপসংস্কৃতি নির্মূল হবে যদি এটা ধরে রাখা যায়। 

কিন্তু সব বিষয় হচ্ছে সেটা কত সময় পর্যন্ত ধরে রাখা যাবে। সর্বোপরি এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো শুভ উদ্যোগ।


এসডি/