পৃথিবী টিপিং পয়েন্টের দ্বারপ্রান্তে

জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব দিন দিন আরও তীব্র হচ্ছে। চরম আবহাওয়া, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে— পৃথিবী দ্রুত এক অজানা সংকটের দিকে এগোচ্ছে। এই অবস্থায় বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে না পারলে মারাত্মক পরিণতির মুখে পড়বে মানবসভ্যতা— এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞাপন
ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ৩০’-এর তৃতীয় দিনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখনই কার্যকর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ টিপিং পয়েন্ট অতিক্রম করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধি, মন্ত্রী ও বিশেষ দূতদের উপস্থিতিতে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে— গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস, ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তর এবং জলবায়ু অর্থায়ন।
চীন নবায়নযোগ্য শক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আরও উদ্যোগ দরকার বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (CREA) জানিয়েছে, গত ১৮ মাসে দেশটি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে ২০০৫ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন তীব্রতা ৬৫ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতিতে এখনো পিছিয়ে আছে বেইজিং।
বিজ্ঞাপন
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম বলেন, “আমরা সবুজ প্রযুক্তি ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কার তেল-গ্যাস তুরপুন পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী।”
পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ-এর শীর্ষ বিজ্ঞানী জোহান রকস্ট্রোম বলেন, “বিপর্যয়কর পরিবর্তন এড়াতে প্রতি বছর অন্তত ১০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাস থেকে অপসারণ করতে হবে।”
অন্যদিকে, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস ফিল্ড সতর্ক করে বলেন, “১.৫ ডিগ্রি সীমা অতিক্রম করা মানে পৃথিবীকে বহু দশকের জন্য টিপিং পয়েন্টের মুখে ঠেলে দেওয়া। অ্যান্টার্কটিকা, গ্রিনল্যান্ড ও আমাজনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল তখন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।”
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই পৃথিবী প্যারিস চুক্তির নির্ধারিত সীমা ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
এদিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যায় বেলেমে নিরাপত্তা বলয় ভেঙে প্রতিবাদে নামে কয়েকটি আদিবাসী ও পরিবেশবাদী সংগঠন। তারা “আমাদের বন বিক্রির জন্য নয়” এবং “আমাদের ছাড়া সিদ্ধান্ত নয়”— এই স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠেন। তাদের অভিযোগ, সম্মেলনের আয়োজন ও অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হলেও বন সংরক্ষণ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে পর্যাপ্ত সহায়তা নেই।
আমাজনের বিশিষ্ট আদিবাসী নেতা কায়াপো প্রধান রাওনি বলেন, “বনের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে আদিবাসীদের ক্ষমতায়ন ও মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।”
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন শাখা) মো. নাভিদ সাইফুল্লাহ শিগগিরই এটি উদ্বোধন করবেন। প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশের জলবায়ু উদ্যোগ, ঝুঁকি ও অভিযোজন পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
কপ৩০-এ এবার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাস্তবায়নভিত্তিক পদক্ষেপে— গ্লোবাল স্টকটেক পর্যালোচনা, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের কাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি রোডম্যাপ এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার সময়সীমা নির্ধারণে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “কপ৩০ হবে প্রতিশ্রুতির নয়, বরং বাস্তব ফলাফল নিশ্চিত করার সম্মেলন।”
বিজ্ঞাপন
রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী কপ৩২ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায়।








