যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন, কঠিন হচ্ছে গ্রিন কার্ড

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের গ্রিন কার্ড ও অন্যান্য অভিবাসন সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করার পথে হাঁটছে মার্কিন প্রশাসন। এ লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন প্রশাসন নতুন এক অভিবাসন নীতি প্রণয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দেশটির গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অভ্যন্তরীণ নথি পর্যালোচনায় ওই তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। এতে বলা হয়েছে, এখনও চূড়ান্ত না হওয়া খসড়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (ইউএসসিআইএস) বিভাগ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ‘‘দেশের নাগরিকদের’’ নির্দিষ্ট কিছু অভিবাসন আবেদন মূল্যায়নের সময় গুরুত্বপূর্ণ নেতিবাচক আবেদনকারী হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের সময় ইউএসসিআইএসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা ডগ র্যান্ড এই সিদ্ধান্তকে ‘‘একটি মৌলিক পরিবর্তন’’ পরিবর্তন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেছেন, ‘‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এসে যারা অবস্থান করছেন, এমন লোকদের স্থায়ী হওয়ার প্রত্যাশাকে উল্টে দিতে চাইছেন। এটি বৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার আরও একটি ধাপ বলে বিবেচিত।’’
বিজ্ঞাপন
কী বদল আনবে নতুন নীতি?
খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী :
বিজ্ঞাপন
১. ইউএসসিআইএস কর্মকর্তারা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলোর আবেদনকারীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেতিবাচক হিসেবে গণ্য করবেন।
২. এই নীতি গ্রিন কার্ড, আশ্রয়, প্যারোল এবং আরও কিছু বিবেচনাধীন সুবিধাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
৩. তবে নাগরিকত্বের আবেদনের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন কর্মকর্তারা বর্তমানে কমিউনিটির সঙ্গে সম্পর্ক, অপরাধের রেকর্ড এবং মানবিক প্রয়োজনের মতো বিষয় বিবেচনা করে থাকেন। নতুন নীতি তাদের সিদ্ধান্তে জাতিগত অথবা দেশভিত্তিক ঝুঁকিকে যুক্ত করবে।
ইউএসসিআইএসে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা মাইকেল ভালভার্দে নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘‘মানুষ আদৌ এই নেতিবাচক বিষয় কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না, অথবা এটি তালিকাভুক্ত দেশগুলোর মানুষের জন্য কার্যত নিষেধাজ্ঞা হয়ে দাঁড়াবে কি না, সেটি দেখার বিষয়।’’
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় আছে কোন কোন দেশ?
গত জুনে নতুন করে মার্কিন প্রশাসনের জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে:
১. আফগানিস্তান
বিজ্ঞাপন
২. মিয়ানমার
৩. চাদ
৪. কঙ্গো প্রজাতন্ত্র
বিজ্ঞাপন
৫. ইকুয়েটরিয়াল গিনি
৬. ইরিত্রিয়া
৭. হাইতি
বিজ্ঞাপন
৮. ইরান
৯. লিবিয়া
১০. সোমালিয়া
বিজ্ঞাপন
১১. সুদান
১২. ইয়েমেন
এছাড়া আরও সাতটি দেশের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব দেশের নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস অথবা পর্যটক কিংবা শিক্ষার্থী ভিসাও পাবেন না:
বিজ্ঞাপন
১. বুরুন্ডি
২. কিউবা
৩. লাওস
৪. সিয়েরা লিওন
৫. টোগো
৬. তুর্কমেনিস্তান
৭. ভেনেজুয়েলা
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, কলোরাডোর বোল্ডারে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করা বিদেশিদের প্রবেশ দেশের জন্য কতটা বিপজ্জনক; তা আবারও প্রমাণ করেছে এবং এজন্যই এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।
কেন এসব দেশ?
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের খসড়া নীতি অনুযায়ী কিছু দেশ :
১. যথেষ্ট স্ক্রিনিং বা পরিচয় যাচাই-সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করে না
২. পাসপোর্টের নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা বজায় রাখে না
৩. এমন নথি সরবরাহ করতে পারে না, যা ইউএসসিআইএস যথেষ্ট যাচাইযোগ্য মনে করে
সমালোচকরা বলছেন, এই নীতি সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি ত্রুটির জন্য অন্যায়ভাবে নাগরিকদের শাস্তি দিচ্ছে।
ইউএসসিআইএসের সাবেক নীতি বিশ্লেষক সারাহ পিয়ার্স বলেন, এতে প্রত্যাখ্যান বাড়বেই... এই নীতির সমস্যা হলো, তারা আগে থেকেই ধরে নিচ্ছে যে কেউ নির্দিষ্ট দেশের নাগরিক হওয়ায় তার আবেদন খারাপ বিবেচিত হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে অবস্থানরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই নীতি প্রযোজ্য হলে এটি আরও আইনগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
আগের মতো ছাড় পাবেন কারা?
মূল ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় যেসব ছাড় ছিল, তার মধ্যে রয়েছে:
১. যাদের আগেই ভিসা ছিল
২. গ্রিন কার্ডধারী (আইনি দিক থেকে স্থায়ী বাসিন্দা)
৩. ২০২৬ বিশ্বকাপ বা ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকস উপলক্ষে আগত ক্রীড়াবিদ
৪. বিশেষ অভিবাসী ভিসার যোগ্য আফগান নাগরিক
৫. মার্কিন সরকারের বিশেষ অভিবাসী ভিসাধারী কর্মীরা
৬. ইরানের নির্যাতিত নির্দিষ্ট জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা
৭. জাতীয় স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কেস-টু-কেস ভিত্তিতে অনুমোদিত ছাড়প্রাপ্ত ব্যক্তিরা
তবে অতিরিক্ত ছাড় নির্ধারণ করা না হলে নতুন গ্রিন কার্ড-সংক্রান্ত নীতি ভবিষ্যতে এসব গোষ্ঠীর অনেকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।








