ভূমিকম্পের প্রভাবে বাংলাদেশে যেভাবে বদলে গিয়েছিল নদীর গতিপথ

পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অন্যতম একটি কারণ হলো ভূমিকম্প। কোথাও শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানলে সেখানে বেশ ক্ষয়ক্ষতিসহ ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরসঙ্গে ভূ-প্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে ভূমিকম্প।
বিজ্ঞাপন
১৭৮৭ সালে বাংলাদেশে এমন কিছুই করেছিল শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প। ওই ভূমিকম্প ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথকে চিরতরে বদলে দিয়েছিল। যার ফলে নদীর পুরোনো ধারা শুকিয়ে নতুন এবং শক্তিশালী যমুনা নদের সৃষ্টি হয়েছিল। নদী বিজ্ঞান ও ভূতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনাটি বাংলাদেশের নদীর ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়।
১৭৮৭ সালের আগে ব্রহ্মপুত্র নদ আসাম থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ নামে ময়মনসিংহ অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হতো। সেই সময় নদীটি আজকের যমুনা পথের পরিবর্তে ভৈরব বাজারের কাছে মেঘনার সাথে মিলিত হতো। কিন্তু ভূমিকম্পের সময় সবকিছু বদলে যায়।
বিজ্ঞাপন
ভূতত্ত্ববিদদের মতে, শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের ফলে শুধু ভূপৃষ্ঠে কম্পন হয়নি, বরং মাটির নিচেও স্থায়ী পরিবর্তন এসেছিল। বিশেষ করে ভূমিকম্পের তীব্রতায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের উত্তর দিকে নদীর তলদেশের মাটি উঁচু হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনাকে ভূ-বিজ্ঞানে টেকটোনিক উত্থান বলা হয়।
নদীর তল উঁচু হয়ে যাওয়ায় পুরোনো পথে জলের স্বাভাবিক ও দ্রুত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ব্রহ্মপুত্রের বিশাল স্রোত তখন সেই বাধা পেরিয়ে যেতে পারছিল না। এছাড়া ভূমিকম্পের ফলে পাহাড় এবং উঁচু অঞ্চলে ব্যাপক ভূমিধস হয়েছিল। এই ভূমিধসের কারণে বিপুল পরিমাণ পলি, বালি ও নুড়ি পাথর স্রোতে ভেসে এসে নদীর উঁচু হয়ে যাওয়া পুরোনো খাতে জমে গিয়েছিল, যা নদীটিকে প্রায় ভরাট করে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: কলকাতায়ও ভূমিকম্প অনুভূত
বিজ্ঞাপন
পুরাতন পথে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, ব্রহ্মপুত্রের পানি তখন অপেক্ষাকৃত নিচু এবং দুর্বল ভূখণ্ড দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নতুন পথ খুঁজে নিয়েছিল। এই নতুন এবং প্রধান ধারাটিই যমুনা নদ নামে পরিচিত।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পরিণতি
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদটি তার মূল পানিপ্রবাহ হারানোর পর একটি শাখা নদী বা মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছিল। এটি এখনও ময়মনসিংহের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়, তবে এর গভীরতা ও স্রোত পূর্বের তুলনায় অনেক কম।








