দেশের স্বার্থে খালেদা জিয়া যে কৌশলে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিল

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) মৃত্যুবরণ করেছেন। তার প্রয়াণের পর ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাকে একজন ভারত-বিরোধী বাংলাদেশি নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করছে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষ করে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে খালেদা জিয়ার শাসনামলে গৃহীত একাধিক সিদ্ধান্ত ও অবস্থান তুলে ধরেছে, যেগুলো বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে টানাপোড়েনের দিকে নিয়ে গিয়েছিল বলে তাদের বিশ্লেষণ।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও খালেদা জিয়া ভারতে সরকারি সফর করেছেন মাত্র দুইবার। তার রাজনৈতিক দর্শনে ভারতের পরিবর্তে বিকল্প কূটনৈতিক মেরুকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা ছিল স্পষ্ট।
বিজ্ঞাপন
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন খালেদা জিয়া। দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি তিনি তিন দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস গড়েন, ১৯৯৬ সালে স্বল্প সময়ের জন্য দ্বিতীয় মেয়াদ, ২০০১ সালে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তিনি রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে ছিলেন।
ইন্ডিয়া টুডের বিশ্লেষণে বলা হয়, খালেদা জিয়ার শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তুলনামূলকভাবে উত্তপ্ত। তিনি ভারতের পরিবর্তে চীন ও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার দিকে বেশি মনোযোগ দেন। প্রথম মেয়াদেই এই কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
খালেদা জিয়া গঙ্গা পানিবণ্টন ইস্যুতে ভারতের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন। তিনি বারবার অভিযোগ করতেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এই ইস্যুতে তিনি শুধু দ্বিপাক্ষিক আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং জাতিসংঘ ও ইসলামিক দেশগুলোর কাছেও বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে ভারতকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: আমিরাতকে আল্টিমেটাম দিল সৌদি
বিজ্ঞাপন
১৯৯২ সালে প্রথম ভারত সফরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও যখন অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রসঙ্গ তোলেন, তখন খালেদা জিয়ার জবাব ছিল স্পষ্ট ও তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি বলেন, ভারতে বাঙালিরাও বাংলা বোঝে ও বাংলায় কথা বলে—এর অর্থ এই নয় যে তারা বাংলাদেশি।
এই মন্তব্য দুই দেশের সম্পর্কের বাস্তবতাকে নতুনভাবে আলোচনায় আনে বলে উল্লেখ করেছে ইন্ডিয়া টুডে।
বিজ্ঞাপন
২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট সরকার গঠন করার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও অবনতি ঘটে। ওই মেয়াদে, ২০০২ সালে ভারতকে পাশ কাটিয়ে চীনের সঙ্গে একটি সামরিক চুক্তি করেন খালেদা জিয়া।
এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ট্যাংক, যুদ্ধজাহাজসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের দায়িত্ব পায় চীন—যা ভারতের জন্য কৌশলগত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের প্রশ্নে খালেদা জিয়া ছিলেন কঠোর বিরোধী।
বিজ্ঞাপন
তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, টোল ছাড়া ভারতীয় ট্রাক চলাচলের সুযোগ দেওয়া বাংলাদেশের জন্য ‘দাসত্বের শামিল’। তার মতে, এই ধরনের ট্রানজিট সুবিধা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও সিদ্ধান্তগুলো ছিল মূলত বাংলাদেশের সার্বভৌম স্বার্থকেন্দ্রিক, যেখানে আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা ছিল প্রধান বিবেচ্য। এসব কারণেই তার শাসনামল ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একাধিকবার উত্তেজনার জন্ম দেয়।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে








