সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিদেশি সম্পদে দুদকের ২৩ বস্তা আলামত জব্দ

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিদেশে অর্জিত সম্পদ ও অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজ রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
তাদের দেওয়া তথ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২৩ বস্তা আলামত জব্দ করেছে। এসব বস্তায় বিদেশে সম্পদ অর্জনের নথি, বিল পরিশোধের তথ্য এবং ভাড়া আদায়ের আলামত রয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিকলবাহা এলাকার সিকদার বাড়ি থেকে এসব আলামত জব্দ করা হয়।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের ৫ দিনের রিমান্ড চলছে। রিমান্ডে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, অনেকগুলো নথি গায়েব করা হয়েছিল, যেগুলো রুকমিলা জামানের ড্রাইভার ইলিয়াসের বাসায় রাখা ছিল। শুক্রবার সেখানে অভিযান চালানো হলেও দুদকের অভিযানের খবর পেয়ে আগেই বস্তাগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। ওই দিন বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখা যায়, দুদক যাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে আলামতগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, পরে একটি ছোট বাসা থেকে ২৩ বস্তা আলামত জব্দ করা হয়। কয়েকটি বস্তা খুলে দেখা গেছে—বিদেশে সম্পদ অর্জনের ক্রয়সংক্রান্ত পেমেন্ট, বাড়ি ভাড়া আদায়ের তথ্য, বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও কোর্টের আদেশসংক্রান্ত নথি রয়েছে। এখনও সব বস্তা খোলার সুযোগ হয়নি, কাজ চলছে।
এর আগে, ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে দুদকের একটি টিম অভিযান চালিয়ে জাবেদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে। ১৮ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
বিজ্ঞাপন
দুদক সূত্রে জানা যায়, উৎপল পাল আরামিট গ্রুপের এজিএম হলেও দীর্ঘদিন ধরে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে বিদেশে সম্পদ তৈরি ও দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়, যেখানে প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিপুল পরিমাণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ তথ্যের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
উৎপল পাল দেশ থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের মূল হোতা বা মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করতেন। অন্যদিকে, আব্দুল আজিজ আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের এজিএম হিসেবে কর্মরত থেকে জাবেদের সম্পত্তি কেনাবেচা, ভাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতেন।
এর আগে ২৪ জুলাই দুদকের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে ভূমিমন্ত্রী জাবেদসহ ৩১ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় জাবেদের স্ত্রী ও ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান (৪৬), ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী (৪৬), জাবেদের বোন রোকসানা জামান চৌধুরী (৫৬) এবং ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ (৫৫) সহ আরও অনেকে আসামি হিসেবে রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খোলা হয়—ভিশন ট্রেডিং, আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রাম বন্দর শাখায় হিসাব খুলে গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকার টাইম লোন অনুমোদন করানো হয়।
ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটির ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ উপেক্ষা করে ২০২০ সালের ৮ মার্চ পরিচালনা পর্ষদ ওই ঋণ অনুমোদন করে। এরপর সেই টাকা ভাগ করে একই ব্যাংকে খোলা চারটি হিসাবে স্থানান্তর করা হয় এবং নগদে উত্তোলন করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে টাকা স্থানান্তর করা হয়, সেগুলোর মালিক ছিলেন আরামিট গ্রুপের কর্মচারী।
অভিযোগে বলা হয়েছে, নগদে উত্তোলিত অর্থ পে-অর্ডার ও ভাউচারের মাধ্যমে ইউসিবিএল ব্যাংকের বহদ্দারহাট শাখায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের হিসাবে জমা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন।