ইসির স্বাধীনতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে সমালোচনা-প্রশ্ন

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপর আস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তাদের অভিযোগ, ইসি দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না—সেই সংশয়ও প্রকাশ করেছে দলগুলো।
বিজ্ঞাপন
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দিনের সংলাপ অনুষ্ঠানে এসব মতামত উঠে আসে। দিনের দুই পর্বে ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে বড় দলগুলোর আচরণবিধি না মানা, ভোটকেন্দ্র দখল, সহিংসতা ও অনিয়মের আশঙ্কা তুলে ধরে দলগুলো ইসিকে অধিকতর কঠোর হওয়ার আহ্বান জানায়। তাদের দাবি—আচরণবিধি ভঙ্গ করলে প্রয়োজন হলে প্রার্থিতা বাতিল পর্যন্ত করতে হবে।
সমালোচনার জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও কমিশন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি দলগুলোকে অযথা সমালোচনা না করে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
বিজ্ঞাপন
সিইসি আরও বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না—আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংলাপে তিন নির্বাচন কমিশনার, ইসির জ্যেষ্ঠ সচিবসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আগামী বুধবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ আরও ১২ দলের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
বিকল্পধারা বাংলাদেশ দলের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, বড় দলগুলো আচরণবিধি মানে না। তিনি বলেন, কয়েকটি আসনে প্রার্থিতা বাতিল করলে বাকিরা নিয়ম মেনে চলবে—তাহলেই সুষ্ঠু নির্বাচনের বিশ্বাস তৈরি হবে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম গণভোটের কারণে ভোটকেন্দ্রে চাপ বাড়তে পারে উল্লেখ করে বুথ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।
ন্যাপ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে পাওয়া যায়নি। ইসির সদিচ্ছা থাকলে ভালো নির্বাচন সম্ভব।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, আচরণবিধিতে সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে এবং এআই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
জাগপা'র সহসভাপতি রাশেদ প্রধান নির্বাচন প্রচারণায় সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, মনিটরিং টিম গঠন এবং জামানত কমানোর দাবি জানান।
জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব বন্ধ না হলে নির্বাচন তামাশায় পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেন।
ইসলামী ফ্রন্ট-এর মহাসচিব আব্দুস সামাদ বলেন, প্রতীক বরাদ্দ ইস্যুতে ইসির অবস্থান দুর্বল হওয়ায় তাদের স্বাধীনতায় প্রশ্ন উঠেছে। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে ইসিকে কঠোর হতে হবে।
বিজ্ঞাপন
খেলাফত মজলিস-এর যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসীর আলী বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই যৌথ বাহিনীকে মাঠে রাখতে হবে এবং ভোটের আগে সেনা মোতায়েন করতে হবে।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)-এর সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং কালো টাকা বন্ধের দাবি জানান। তিনি মনে করেন, পোস্টার বন্ধ করলে প্রার্থীরা ভোটারের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বে।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশনার তহমিদা আহমদ বলেন, জাতি চাইছে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন; দলগুলো সহযোগিতা করলে তা সম্ভব।
আরেক কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, অনিয়ম হলে রিটার্নিং কর্মকর্তারা পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা রাখেন এবং কেন্দ্র পর্যায়ে পদক্ষেপ নেবেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে কোনো সমঝোতা হবে না।








