লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনালের দায়িত্ব পেল বিদেশি প্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিল সরকার। সোমবার পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালস এবং সুইজারল্যান্ডের মেডলগ–এর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এর মাধ্যমে লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনালের নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব দীর্ঘমেয়াদে বিদেশি দুই অপারেটরের কাছে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, পিপিপি অথরিটি, বাংলাদেশ সরকার এবং এপিএম টার্মিনালস লালদিয়া চরের টার্মিনাল প্রকল্প নিয়ে চুক্তিতে সই করে। প্রকল্পে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এপিএম টার্মিনালস। পিপিপি কাঠামোয় নির্মিতব্য এ টার্মিনালের কাজ ২০৩০ সালে শেষ হবে। চুক্তির মেয়াদ ৩৩ বছর, পরে এটি আরও ১৫ বছর বাড়ানো যাবে।
সম্পূর্ণ নির্মাণ শেষে লালদিয়া টার্মিনালের বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা হবে ২০ লাখ টিইইউ, যা দেশের সামগ্রিক সক্ষমতা প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করবে।
এপিএম টার্মিনালসের চেয়ারম্যান রবার্ট মার্স্ক উগলা জানিয়েছেন, লালদিয়ায় তাদের বিনিয়োগ হবে বাংলাদেশে কোনো ইউরোপীয় কোম্পানির সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ, এবং এটি দেশের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে নৌ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতির কারণে অতীতে এই প্রকল্প এগোয়নি—এ মন্তব্যও করেন তিনি।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন ভিডিও বার্তায় বলেন, লালদিয়া টার্মিনাল বাংলাদেশের জন্য ‘গেটওয়ে টু দ্য ওয়ার্ল্ড’ হয়ে উঠবে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেল সুইজারল্যান্ডের মেডলগ। চুক্তির মেয়াদ ২২ বছর। চুক্তি অনুযায়ী, মেডলগ টার্মিনালের কার্যক্রম, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, অটোমেশনসহ সামগ্রিক উন্নয়নের দায়িত্ব নেবে। লক্ষ্য হলো বার্ষিক হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজার টিইইউতে উন্নীত করা।
মাল্টিমোডাল পরিবহন বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটি নৌপথে বার্জ যুক্ত করবে এবং ট্রাক–কাভার্ডভ্যান ব্যবস্থাও সম্প্রসারিত করবে। এতে আমদানি-রপ্তানি খাতের ‘লিড টাইম’ কমবে এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় নতুন সক্ষমতা তৈরি হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরের ব্যবস্থাপনায় লাভজনক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি লালদিয়া আন্তর্জাতিক মানে গড়ে উঠলে দেশের বন্দর কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
বিজ্ঞাপন
বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে এবং চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বন্দর কার্যক্রমের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
এ দুই টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন আন্দোলন করে আসছে। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এটি ‘গণবিরোধী সিদ্ধান্ত’ বলে উল্লেখ করেছে এবং চুক্তি বাতিল না হলে হরতাল ও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ ঘোষণার হুমকি দিয়েছে। তারা বলছে, স্টেকহোল্ডারদের মতামত না নিয়েই দ্রুততার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে ডেনমার্ক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, লালদিয়া প্রকল্প দেশের বাণিজ্য, বিদেশি বিনিয়োগ এবং ইউরোপীয় অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। তিনি এপিএম টার্মিনালসকে দ্রুত কাজ শেষ করার আহ্বান জানান।
উগলা জানান, টার্মিনাল চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ নোঙরের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা জাতীয় অর্থনীতিকে বড় পরিসরে এগিয়ে নেবে।








