কেন ইউনিফর্ম বানিয়েছিলেন সোহেল তাজ, উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৭৪ জন নিহত হওয়ার ১৬ বছর পর, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য তথ্য সামনে এসেছে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে। নতুন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের সংযুক্তি ও অস্বাভাবিক কার্যকলাপের বিবরণ।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনের ৮ নম্বর সাক্ষী হাবিলদার জসিম উদ্দিন খান এবং দর্জি আছিফুর রহমান আকাশের জবানবন্দিতে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক সপ্তাহ আগে, ১৭ ফেব্রুয়ারি, সোহেল তাজের জন্য বিশেষভাবে বিডিআর ইউনিফর্ম তৈরি করা হয়েছিল।
হাবিলদার জসিম জানিয়েছেন, তৎকালীন প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশেই ইউনিফর্ম তৈরি হয়। দর্জি আকাশের বর্ণনা অনুযায়ী, সদর রাইফেল ব্যাটালিয়নের মেজর মোস্তাক তাকে অফিসে নিয়ে যান এবং সোহেল তাজের মাপ নিয়ে ইউনিফর্ম বানানো হয়। ইউনিফর্মে কোনো র্যাংক না থাকলেও ‘ডিপ সাইন’ রাখা হয়।
উল্লেখযোগ্য হলো, ইউনিফর্ম তৈরির ঘটনায় পিলখানার অন্যান্য কর্মকর্তা এবং শহীদ কর্নেল আনিস ও মেজর হুমায়ুনসহ অনেকেই একাধিকবার ইউনিফর্মটি দেখেছেন।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসসহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ডে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন।
শেখ হাসিনা সরাসরি গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ। ফজলে নূর তাপস হত্যাযজ্ঞের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম সহ কয়েকজন নেতা সত্য চাপা রেখে হত্যাকারীদের সহায়তা করেছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রহসনমূলক অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে হত্যাকারীদের সুযোগ দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়ের অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল জহির উদ্দীন আহম্মেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল এসএম জিয়াউর রহমান, লে. জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামসুল আলম চৌধুরী, মেজর জেনারেল মাহমুদ হোসেন সহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। এছাড়া তিনজন সাংবাদিকের নামও তদন্ত প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা এবং গোয়েন্দা ব্যর্থতার জাল একে অপরকে শক্তভাবে জড়িয়ে হত্যা-অভিযানকে কার্যকর করেছে। কমিশন এ ঘটনায় জড়িত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত ঘোষণা করেছে।
বিজ্ঞাপন
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৪০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এই হত্যাযজ্ঞের নেপথ্য তথ্য, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং ষড়যন্ত্রের সবকিছু বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো পড়ার পর বাস্তবায়ন করা হবে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে, পিলখানা হত্যাযজ্ঞ শুধু সামরিক বিদ্রোহ নয়, এটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতার মধ্যে সংঘটিত এক রাষ্ট্রীয় ট্র্যাজেডি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।








