সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস আজ, ৫৩ বছর পরও নেই শহীদ স্মৃতিসৌধ

আজ ৭ ডিসেম্বর, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরার জন্য বিশেষ এক ইতিহাসের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দেশীয় দোসরদের হাত থেকে মুক্ত হয় সাতক্ষীরা।
বিজ্ঞাপন
মুক্তির দিন শহরের প্রতিটি রাস্তাঘাট, গ্রাম-বাজার ও সীমান্ত এলাকা আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। মুক্তিযোদ্ধারা থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়ে শহরে প্রবেশ করে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে দেন। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে মানুষ রাস্তায় নেমে বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরার মাটিতে অন্তত ৫০টির বেশি সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন, অনেক সাধারণ মানুষও প্রাণ দিয়েছেন। ২ মার্চ পাকিস্তানবিরোধী মিছিলে রাজাকারদের গুলিতে শহীদ হন আব্দুর রাজ্জাক। এরপর সাতক্ষীরার তরুণেরা সংগঠিত হয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়। তারা ব্যাংক থেকে অর্থ, অলংকার ও অস্ত্র সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
বিজ্ঞাপন
২৭ মে ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। সাতক্ষীরার টাউন শ্রীপুর, বৈকারী, খানজিয়া এবং অন্যান্য এলাকায় ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৯ নভেম্বর পাক বাহিনীকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে কেন্দ্রীয় পাওয়ার হাউসে টাইম বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যার ফলে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়।
৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বাঁকাল, কদমতলা ও বেনেরপোতা ব্রিজ ধ্বংস হয়। ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়, শহরের প্রতিটি প্রান্তে উদযাপন হয় মুক্তির উল্লাস।
সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা স.ম. শহিদুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরায় দুটি সেক্টর ছিল—৮ ও ৯। এই দুই সেক্টরের যৌথ লড়াইয়েই সাতক্ষীরা মুক্ত হয়। আমাদের কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিলসহ বহু বীর সেনানী। মুক্ত দিবসে যেমন আনন্দ আছে, তেমনই আছে দুঃখ। অনেক সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। তাদের পরিবার আজও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, স্বাধীনতার পর সাতক্ষীরায় ২,৩০০–২,৪০০ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, বর্তমানে বেঁচে আছেন মাত্র ৮০০–৮৫০ জন। তাই শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো অত্যন্ত জরুরি।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সাতক্ষীরাবাসী মনে করছেন, শহীদদের আত্মত্যাগ চিহ্নিত করতে শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সময় এসেছে। এটি শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং গৌরব, ইতিহাস ও প্রতিরোধের প্রতীক, যা নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শেখাবে।
বিজ্ঞাপন
আজ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা এবং বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করেছে। এছাড়া সাতক্ষীরা সামাজিক সংগঠনগুলো সন্ধ্যায় শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের আয়োজন করেছে, যাতে শহীদদের আত্মত্যাগ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।
সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস উদযাপন দেশের জন্য একটি স্মরণীয় দিন, যা স্বাধীনতার গৌরব এবং শহীদদের ত্যাগের গল্প বয়ে আনে। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদদের স্মৃতিসৌধের অভাবে স্থানীয়দের দুঃখ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের সংরক্ষণের তাগিদ আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।








