জাবিতে ‘প্রশাসনের গায়ের জোরে’ অপরিকল্পিত নগরায়ন


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, ২২শে এপ্রিল ২০২৪


জাবিতে ‘প্রশাসনের গায়ের জোরে’ অপরিকল্পিত নগরায়ন
ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তথা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন না করে গায়ের জোরে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ তথা নগরায়ন না করার দাবি জানিয়ে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট।


জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক আহসান লাবিব স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবিগুলো জানানো হয়। 


বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প' শিরোনামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১৪৪৫ কোটি টাকার একটি বিশাল বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এই বরাদ্দকৃত অর্থ বিনিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যতখানি সদিচ্ছা ও সতর্কতার প্রয়োজন ছিলো, বিগত দিনগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে আমরা তার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি অবলোকন করি। বাজেটটি প্রণয়নের পর থেকেই নানান দূর্নীতি করতে শুরু করে প্রশাসন। যার ফলস্বরূপ সাধারণ অংশীজনেরা এর সুফল কখনোই ঠিকভাবে পাননি, ভবিষ্যতেও পাবেন কিনা সন্দেহ।’


অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ বন্ধের দাবি জানিয়ে তারা আরও বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের অন্যতম দাবী ছিলো অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের 'মাস্টারপ্ল্যান' তথা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা, যার মাধ্যমে শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজন, প্রাণ প্রকৃতি, জীববৈচিত্রের সার্বিক উন্নতি সাধিত হবে। পরবর্তীতে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করে প্রায় গায়ের জোরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। দুইটি ধাপের কাজ শেষ হওয়ার পর, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি ও পরিবেশ থেকে এটি খুব নিদারুণভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া অপরিকল্পিত ভবন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কংক্রিটের নগরীতে পরিণত করা ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য সাধন করতে পারেনি।’


আরও পড়ুন: রাবিতে গবেষণাগার স্টাফদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু


মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণেরই কুফল সম্পর্কে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেন, আমরা দেখেছি মহাসড়কের পাশে ছাত্রীদের তিনটি হল নির্মাণ করায় তাদেরকে নিয়মিত বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যানবাহনের শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। নবনির্মিত শেখ রাসেল হল ও শহীদ তাজউদ্দিন হলের শিক্ষার্থীদের সাথে শহীদ রফিক_জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটেছে, যা মূলত মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণেরই কুফল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে আবারো ক্যাম্পাস ছুটির সুবিধা নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই ভবন নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছে, প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে যা বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নয়নের বদলে অবনতির দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশংকা রয়েছে।


জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরণ এহসান এবং সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জাহান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনের মতামতকে উপেক্ষা করে বারবার অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হীনমন্যতা ও অনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকেই নগ্নভাবে সকলের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। জ্ঞান উৎপাদন কারখানা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের যে অবস্থান- তাকে নষ্ট করে, শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিবেশকে ধ্বংস করে, এই অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন আমরা চাই না। সকল বিভাগ এবং অনুষদের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট নিরসনের মাধ্যমে পড়াশোনার পরিবেশ আরো উন্নত হোক তা আমাদেরও চাওয়া। তবে যত্রতত্র অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনা বলেই এতদিনে তা প্রতীয়মান হয়েছে।’


আরও পড়ুন: ইবির শেখ রাসেল হল প্রভোস্টের দায়িত্বে অধ্যাপক ড. মুর্শিদ আলম


জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট সবসময় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার দাবি জানিয়ে এসেছে, এখনো আমরা আমাদের দাবীতে অনড় আছি। সেই সাথে দ্রুত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব এবং বারবার নানা অজুহাত দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা নিয়ে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।


উল্লেখ্য, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের পাঠকক্ষের সমস্যা নিরসনে প্রায় ৬৫০০ শিক্ষার্থী ধারণক্ষম একটি লেকচার থিয়েটার হলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ও অন্যান্য অংশীজনদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাস্টারপ্ল্যানের গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং টিএমইসি (Technical Monitoring and Evaluation Committee) গঠন করলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই।


জেবি/এসবি