ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ৩০ হরিণ'র সলিল সমাধি, আহত ১৫
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:১৭ অপরাহ্ন, ২৮শে মে ২০২৪
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনে। ঝড়ের কবলে পড়ে মারা গেছে হরিণসহ অন্য প্রাণী।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে বনের কটকা ও দুবলা এলাকা থেকে ৩০টি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আরও ১৫টি আহত হরিণকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেছেন বনরক্ষকীরা। এ ছাড়া এই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বনের অভ্যন্তরে ২৫টি টহল ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লবণ পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে অন্তত ৮০টি মিঠা পানির পুকুর। খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো সোমবার (২৭ মে) দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। আরও হরিণের সন্ধানে পুরো সুন্দরবনে তল্লাশি চলছে বলেও জানান তিনি।
মিহির কুমার দো বলেন, রবিবার (২৬ মে) বিকাল থেকে একটানা ২০ ঘণ্টা ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বন বিভাগের বিভিন্ন বন অফিসসহ টহল বোট, টিনের চালা, জানালা-দরজা, সোলার প্যানেল ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে কটকা অভয়ারণ্যে অফিস ঘাটের জেটি বঙ্গোপসাগরের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুবলা, কটকা, কোচিখালি, বগিসহ বিভিন্ন বন অফিসসহ ২৫টি টহল ফাঁড়ির রান্নাঘরসহ অবকাঠামোর টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মিঠাপানির পুকুরগুলোও জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের ৮০টি মিঠাপানির উৎস পুকুরে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বনকর্মীদের পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণীরাও সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে। সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীরা অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে মারা যাওয়ারও খবর মিলেছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, ভেসে গেছে অসংখ্য চিংড়ি ঘের
সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সুন্দরবনের কটকা এবং দুবলা এলাকার নদ থেকে ৩০টি মৃত হরিণ উদ্ধার করে। এ সময় দুবলা এলাকা থেকে আহত আরও ১৫টি হরিণ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেন বনরক্ষীরা।
তবে হরিণের পাশাপাশি আরও বণ্যপ্রাণী মারা যেতে পারে উল্লেখ করে বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো আরও বলেন, সেই সব মৃত প্রাণীর খোঁজে বনরক্ষীরা তৎপর রয়েছে।
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব সুন্দরবনের একমাত্র করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের নানা অবকাঠামো। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে এখানকার পর্যটক চলাচলের কাঠের পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে তছনছ হয়েছে অসংখ্য গাছপালা। তবে পুরো সুন্দরবনের গাছপালাসহ কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করে এখনই বলা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: রেমালের প্রভাবে মোংলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি
এ বিষয়ে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের বন্য প্রাণীদের জন্য পর্যাপ্ত উঁচু টিলা ও শেল্টার রাখা জরুরি। তাহলে এ ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। মিঠা পানির পুকুরের পাড় ও অনেক উঁচু করতে হবে যাতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে না পারে।
এমএল/