Logo

কে এই ফিলিপ স্নাল, যাকে ধরতে মরিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

profile picture
জেলা প্রতিনিধি
ময়মনসিংহ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৯:৪৯
39Shares
কে এই ফিলিপ স্নাল, যাকে ধরতে মরিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ফিলিপ স্নাল । ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার পর আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের এক ব্যক্তি— ফিলিপ স্নাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, হামলার মূল অভিযুক্ত ফয়সাল-আলমগীর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়েছে কি না, সেই রহস্যের চাবিকাঠি ফিলিপ স্নাল। তাকে আটক করা গেলেই স্পষ্ট হবে হামলাকারীরা দেশ ছেড়েছে নাকি এখনও দেশের ভেতরেই রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে ফিলিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুই সহযোগীকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, হালুয়াঘাট উপজেলার গাজীরভিটা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ভুটিয়াপাড়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন— ভুটিয়াপাড়া এলাকার ক্লেমেন রিছিলের ছেলে সঞ্জয় চিসিম (২৫) এবং বিড়ইডাকুনী এলাকার চার্লস রিছিলের ছেলে সিবিরণ দিও (৩৫)।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত অবৈধ পারাপার চক্রের সঙ্গে জড়িত। হাদির ওপর হামলার পর অভিযুক্তদের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পার করে দেওয়ার সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতার অভিযোগেই তাদের আটক করা হয়েছে।

হামলার চার দিন পেরিয়ে গেলেও ফয়সাল-আলমগীরের কোনো সন্ধান পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যেই গুঞ্জন ছড়িয়েছে, ঘটনার দিন শুক্রবার রাতেই হালুয়াঘাট সীমান্ত ব্যবহার করে তারা ভারতে পালিয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হামলার পর মিরপুর থেকে একটি প্রাইভেটকারে করে গাজীপুর হয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছায় অভিযুক্তরা। পরে ওই গাড়ি বদল করে হালুয়াঘাট উপজেলার ধারাবাজার সংলগ্ন একটি ফিলিং স্টেশনের পাশে নামানো হয়।

সেখান থেকে ফিলিপ স্নাল নামে এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলে করে ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত এলাকার দিকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ফিলিং স্টেশনসংলগ্ন এলাকাটি নির্জন হওয়ায় সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি। সন্দেহ করা হচ্ছে, মোটরসাইকেলে করে সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়া হয় অভিযুক্তদের। পরদিন শনিবার থেকেই ফিলিপকে ধরতে বিজিবি ও পুলিশ যৌথ অভিযান শুরু করে, কিন্তু তিনি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফিলিপ স্নালের বাড়ি গাজীরভিটা ইউনিয়নের বুটিয়াপাড়া এলাকায়, যা ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে। ওই এলাকায় কাঁটাতারের নিচে কালভার্ট ও সুড়ঙ্গ রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে অবৈধভাবে মানুষ পারাপার হয়ে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব সুড়ঙ্গ পথেই ঢাকায় হাদির ওপর হামলায় জড়িত আলমগীর ও ফয়সালকে সীমান্ত পার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের ভাষ্য, ফিলিপের মাধ্যমে লোক পাচারের কথা এলাকায় মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। গত বুধবার এলাকায় তাকে দেখা গেলেও এরপর থেকে আর দেখা যায়নি। তিনি কখনো নালিতাবাড়ীর বারমারি এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে, আবার কখনো হালুয়াঘাটের বাবার বাড়িতে থাকতেন এবং নিয়মিত সীমান্ত এলাকায় যাতায়াত করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে ফিলিপ স্নালের পরিবার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তার ছোট বোন সালচি সনাল দাবি করেন, অসুস্থ মাকে দেখতে শুক্রবার সকালে বাড়িতে এলেও বিকেলেই চলে যান ফিলিপ। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। একই সঙ্গে আটক সঞ্জয় চিসিমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তিনি বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, সেখান থেকেই তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ধারা বাজার এলাকা থেকে যে মোটরসাইকেলে করে অপরাধীদের সীমান্তে নেওয়ার কথা সন্দেহ করা হচ্ছে, সেটি বুটিয়াপাড়া এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ফিলিপকে আটক করতে পারলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে অভিযুক্তরা সীমান্ত পেরিয়েছে কি না, কীভাবে যোগাযোগ হয়েছে, অর্থ লেনদেনের বিষয় এবং ওপারে কারা জড়িত।

তিনি আরও জানান, হত্যাচেষ্টা ও মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদির মাথায় গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচারকারী চক্রের দুই সদস্য, অভিযুক্ত ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক এবং আরও এক নারী। তদন্ত এগোলে এই ঘটনার পেছনের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD