সকাল-সন্ধ্যা জ্বলছে না চুলা, দিশেহারা নগরবাসী

রাত ১১ টায় এসে আবার ভোর ৫ টায় চলে যায়
বিজ্ঞাপন
আল-জুবায়ের: বেশ কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সংকট বেড়েছে। ফলে চরম দুভোর্গে পড়েছে নগরবাসী। সময় মতো গ্যাস না পেয়ে খেতে হচ্ছে বাইরের কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁয়। এতে শারীরিক অসুস্থতাসহ গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। মানসিকভাবেও ভেঙে পড়ছেন অনেকেই।
শুক্রবার (৫ জুলাই) কথা হয় রাজধানীর কামরাঙ্গীচর এলাকার হাসিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট, কোনো পরিবর্তন নেই। রাত ১১ টায় এসে আবার ভোর ৫ টায় চলে যায়।
বিজ্ঞাপন
আমলীগোলার বাসিন্দা শিরিন আক্তার জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্না করতে যাই। কিন্তু চুলার ফুল পাওয়ার দেয়ার পরও চুলা মিটিমিটি করে জ্বলছিল। ১০ থেকে ২০ মিনিটেও মধ্যে ভাত রান্না হতো, কিন্তু সেদিন প্রায় ঘণ্টা খানেক সময় লেগেছিল। পরে পাশের বাড়ির রেহেনার মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি তাদের বাসায়ও একই অবস্থা। কী যে জ্বালায় পড়েছি ভাই, এসব কথা কাকে শোনাই।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ বাড়িতেই গ্যাসের সমস্যা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মধ্য থেকে গভীর রাতে রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ কোনো কোনো বাসায় গ্যাস আসছে রাত দেড়টার পর। বাধ্য হয়ে অনেকে বৈদ্যুতিক চুলা কিনছেন। আবার অনেকে সিলিন্ডার গ্যাস কিনছেন। ফলে বাসা ভাড়ার পাশাপাশি গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। যারা বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করছেন তাদেরও গুনতে হচ্ছে বাড়তি বিল।
বিজ্ঞাপন
পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লার বাসিন্দা রবিন চৌধুরী বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে তিনবেলা নিয়মিত খেতে পারছি না। বাসায় মোটেই গ্যাস থাকে না। কখন গ্যাস আসে কখন যায় বুঝতেই পারি না। রান্না করতে অনেক সমস্যা হয়। উপায় না পেয়ে বাইরে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হচ্ছে। আমার এক রুমমেটের বাইরের খাবার খেয়ে ডায়রিয়া হয়েছে। সে তিনদিন হলো অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
বিজ্ঞাপন
গ্যাসের তীব্র সংকট সবচেয়ে বেশি আজিমপুর এলাকায়। এই এলাকায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাসায় গ্যাস একদমই থাকে না। এ এলাকার বাসিন্দা মাজেদা বেগম বলেন, আমাদের এদিকে সকাল থেকে গ্যাস থাকে না। সকালে বাচ্চা ঘুম থেকে উঠার পর ভাত খাওয়ার জন্য কান্না করে। কিন্তু কী করব, অভাবের সংসার। একটা সিলিন্ডারও কিনতে পারি না। এমনিতেই বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুর এলাকায় দিনে তিন-চার ঘণ্টা গ্যাস থাকে না। মগবাজার ওয়্যারলেস গেট, বেইলি রোড, রমনা এলাকার অবস্থাও একই।
বিজ্ঞাপন
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া বলেন, সব এলাকায় সমস্যা নেই। কিছু কিছু এলাকায় আছে। সাপ্লাই কম থাকায় এমনটা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রেগাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরবরাহ এখন কম। আশা করছি, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সমস্যার সমাধান হবে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, সামিট গ্রুপের এলএনজি টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় এখন একটি টার্মিনাল দিয়ে মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ কূপ থেকে আরও ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে কমপক্ষে ৩ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে বর্তমানে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। সমস্যার সমাধানে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: কড়াইল বস্তিতে আবারও আগুন
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামিট গ্রুপের মালিকানাধীন এলএনজি টার্মিনাল। রেমালের আগে বিদ্যুৎ, সারসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিদিন ৩১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হতো। এর মধ্যে ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট আসত গ্যাসক্ষেত্র থেকে। বাকি ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মিলত এলএনজি টার্মিনাল থেকে। দেশে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে সামিটের টার্মিনাল জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর টার্মিনালটির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সমপরিমাণ গ্যাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সিএনজি ফিলিং স্টেশনসহ শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ ও আবাসিক খাতে।
এমএল/








