জামায়াত ক্ষমতায় এলে ফেরার আশঙ্কা আওয়ামী লীগের : সামান্তা শারমিন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, “জামায়াত আর আওয়ামী লীগ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এ দুই দলের গঠনপ্রক্রিয়া, অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং রাষ্ট্রবোধ প্রায় একই রকম। তারা একে অপরকে ব্যবহার করেই রাজনীতি করে আসছে। জামায়াত ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসার চেষ্টা করবে—এটা তাদের পরিকল্পনারই অংশ।”
বিজ্ঞাপন
রবিবার (১৯ অক্টোবর) গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সামান্তা শারমিনের মতে, আওয়ামী লীগের কারণেই জামায়াত আজ রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতকে কোণঠাসা করতে চেয়েছে, তখনই তাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বেড়েছে। এটা আওয়ামী লীগের পরিকল্পনারই অংশ—জামায়াত যত শক্তিশালী থাকবে, আওয়ামী লীগ ততই টিকে থাকবে। এটি তাদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে জামায়াত আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। কিন্তু সিভিল সোসাইটিতে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ অনেকেই এখন সোচ্চার। তারা ভাবছেন, আওয়ামী লীগের ভোট কোথায় যাবে? জামায়াত চেষ্টা করছে যেন এই ভোট শেষ পর্যন্ত তাদের দিকেই থাকে।”
বিজ্ঞাপন
এনসিপি নেত্রী অভিযোগ করে বলেন, “জামায়াত এখন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টায় আছে। জামায়াতের নেতারা আওয়ামী লীগের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলছেন, ‘আমরা আপনাদের ক্ষতি করব না, ক্ষমতায় এলে আপনাদের দেখব।’ সাভার অঞ্চলে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা জেলে আছেন, তাদের পক্ষে লড়ছেন জামায়াতের এক সেলিব্রেটি আইনজীবী। এর আগেও তিনি কিছু বিতর্কিত মামলায় লড়েছিলেন। প্রশ্ন হলো—এটা টাকার জন্য, নাকি রাজনীতি? তিনি আসলে হত্যাকারীদের পক্ষেই দাঁড়াচ্ছেন এবং সেটি সামলানোর সাহস দেখাচ্ছেন।”
আরও পড়ুন: সারজিস আলমের গাড়িবহরে ককটেল হামলা
সামান্তা শারমিন বলেন, “মানুষ এতদিন ধরে দেখেছে আওয়ামী লীগ আর জামায়াত একে অপরের বিপরীতে। কিন্তু বাস্তবে তাদের উদ্দেশ্য প্রায় একই। বিএনপি একসময় জামায়াতকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেছিল, কিন্তু তারা সেই ভারসাম্য রাখতে পারেনি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত—এই তিন দলের পক্ষেই এখন বাংলাদেশকেন্দ্রিক, নাগরিক মর্যাদাপন্থি রাজনীতি করা কঠিন। কারণ তারা কখন কাকে ব্যবহার করবে বা কাদের বিপক্ষে দাঁড়াবে—তা দলের স্বার্থে নির্ধারিত হয় না।”
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, “এনসিপির রাষ্ট্রকল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের কোনো মিল নেই। তাই আমরা পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে চলতে বাধ্য নই। আমরা হয় নিজেদের জোট গঠন করব, নয়তো এককভাবে এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের সক্ষমতা যাচাই করব।”
১৯৭১-এর চেতনার প্রসঙ্গে সামান্তা শারমিন বলেন, “আমাদের ইতিহাসের সূচনা ১৯৭১ সাল থেকে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জনগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। সেই চেতনা ফেরাতে ২০২৪ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। এখন জামায়াত আবার ’২৪-কে ’৭১-এর মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আবারও নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চায়।”
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের আগে দেখতে হবে রাষ্ট্রের প্রস্তুতি কেমন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের কার্যক্রম, নীতি—সবই অসংস্কারকৃত। এই কমিশন কোনোভাবেই ফেয়ার ইলেকশন আয়োজন করতে পারবে না। শুধু শাপলা প্রতীকের উদাহরণ দিলেই বোঝা যায়।”
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও যোগ করেন, “৫ আগস্টের পর থেকে নির্বাচন কমিশনে যেসব পরিবর্তন হয়েছে, তাদের পেছনের সুপারিশ ও ব্যাকগ্রাউন্ড কী—সেটা খুঁজে দেখা দরকার। মৃত ভোটারদের নাম এখনও ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। প্রশাসন দুর্বল, নির্বাচন কমিশনও অক্ষম—এই অবস্থায় ফেয়ার ইলেকশন সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের এই বাস্তবতা বুঝে তবেই আমরা দলীয় প্রস্তুতি নেব। তবে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।”