নারী কেলেংকারীর মহারথী জারিয়াব হবেন এমডি

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংককে ঘিরে। ব্যাংকটির অতীত ও বর্তমান পর্ষদ ও কিছু দুর্নীতিবাজ অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে বরাবরই বিতর্ক চলমান রয়েছে ব্যাংকটিকে ঘিরে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে অন্যায্যভাবে একটি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফে বাধ্য করায় পর্ষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় পদত্যাগ করেন ব্যাংকটির পূববর্তী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন। আর এই বিতর্কিত কর্মকান্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার একজন বিতর্কিত, দুর্নীতিবাজ ও বিকৃত চরিত্রের ব্যাক্তিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগের আরও একটি অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র ও বিভিন্ন দপ্তরে দাখিলীকৃত অভিযোগ থেকে দেখা যায় যে, তড়িঘড়ি করে ব্যাংকটির বর্তমান পর্ষদ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী জারিয়াব নামক একজন বিতর্কিত ব্যাক্তিকে ব্যাংকটির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। যিনি ইতিপূর্বে প্রিমিয়ার ব্যাংক, পদ্মা (ফার্মার্স) ব্যাংক ও ফারইস্ট ফাইন্যান্স থেকে নানামুখী অনিয়ম, দুর্নীতি, অপকর্ম, নারী কেলেঙ্কারি ও মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন।
মোহাম্মদ আলী জারিয়াব একজন ফ্যান্টাসি বয় হিসেবে ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত মুখ। যিনি ইভিনিং ব্যাংকার হিসেবেও পরিচিত। অফিস শুরু করেন দুপুর ১ টার পর আর শেষ হয় রাত ১০ টায়। সর্বশেষ ফারইষ্ট ফাইন্যান্সে এই নিয়মেই অফিস করেছেন এক নাগাড়ে ৫টি বছর। কোম্পানির মান উন্নয়নে একটি পদক্ষেপও তিনি নেননি। লোনের আদায় হওয়া টাকা আইডল ফেলে রেখেছেন ব্যাংকে তাও ছোট ছোট ডিপোজিটরদের অর্থ পরিশোধে উদ্যোগি হননি। মোহাম্মদ আলী জারিয়াব ও তার বসানো পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে অর্থের তছরুপ করেছেন। মোহাম্মদ আলী জারিয়াবের ফারইষ্ট ফাইন্যান্সের নিয়োগটিও ছিল উদ্দেশ্যমুলক আওয়ামী ঘরোনার ৩ জন শেয়ারহোল্ডারের স্বার্থ রক্ষার জন্য। একজন লক্ষিপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন খান এবং অন্যরা আতাহার আলী ও আজমত রহমান (পিতা-পুত্র)। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হওয়া অভিযোগ পত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ কর্মাস ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এই আজমত রহমানকে নিয়ে কিছুদিন পূর্বে বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে স্বগৌরবে খবর প্রকাশ হয়েছিল। আজমত রহমানের বিদেশে টাকা পাঁচার, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়তে তার আটকে থাকা শত শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে নিতে বিএফআইইউ-এর শাহিনুল ইসলামের সাথে সখ্যতা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে কতিপয় দালাল চক্র গড়ে তোলা, মিলেমিশে চক্রাকারে নারী কেলেঙ্কারি ও বিকৃত যৌনাচার, ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আজমত রহমানের বেশ কয়েক ডজন কথিত অর্ধাংগিনী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত রয়েছে। তাদেরকে টাকা পাঁচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাংক লুটেরা চক্রের অন্যতম পুরোধা নাফিজ শরাফতের প্রধান সেনাপতি বিকৃত যৌনচারের দায়ে অভিযুক্ত এবং মাদক সেবন, অর্থ লোপাট ও নারী কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী জারিয়াবকেই এবার বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে এমডি নিয়োগের পায়তারায় লিপ্ত একটি চক্র। আর এই কুকর্মের সাথে জড়িত ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক আতাউর রাহমান এবং ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক মহসিন মিয়া। যাদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও নানা অপকর্মের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, ব্যাংকটির ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিলসের নামে রয়েছে প্রায় ৮৮ কোটি টাকার মন্দ ঋণ আর সেই ঋণের বিপরীতে বকেয়া সুদের সমুদয় অর্থাৎ ৪৮ কোটি টাকা মওকুফ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে জোরপূর্বক পাঠিয়ে তা অনুমোদন করিয়ে আনতে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশারফ হোসেনকে চাপ দেয় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আতাউর রাহমান ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান মহসিন মিয়া। এবং ব্যাংকটির পর্ষদ সভায় সাবেক এমডিকে অকথ্য ভাষায়ও গালিগালাজ করে এই দুই কুশীলব কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক এই এমডিকে সুরক্ষা না দিয়ে উল্টো দুর্নীতিবাজ পর্ষদের পক্ষেই অবস্থান নেয়। ফলশ্রুতিতে আরেকটি বড় ধরণের অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে ব্যাংকটির সেই একই পর্ষদ। কমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়া এই ব্যাংকে স্বতন্র পরিচালক নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত এই বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান সুরুজ মিয়া স্পিনিংয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর সেই সুবাদে পুরানো সম্পর্কের জেরেই অবৈধ উপায়ে জনগণের আমানতের অর্থে পরিচালিত ব্যাংকটির স্বার্থ না দেখে বরং তার চাকুরীরত প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই কাজ করেছেন যা অত্যান্ত গর্হিত কর্মকান্ড হিসেবে বিবেচিত।
বিজ্ঞাপন
দুর্নীতিবাজ ও বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী মোহাম্মদ আলী জারিয়াব সর্বশেষ বিগত ৫ বছরে ফারইষ্ট ফাইন্যান্সে ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় কোম্পানির জন্য কোন কাজ না করে উনি ব্যাক্তিগত ভাবে লাভবান হয়েছেন ও সাবেক শেয়ারহোল্ডার মধ্যে কিছু পরিচালকদের লাভবান করেছেন। এছাড়া বর্তমান ইন্ডিপিন্ডেন্ট পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের আর্থিক ভাবে লাভবান করেছেন। এগুলা নিয়ে সর্বশেষ এজিএমে জেনারেল শেয়ারহোন্ডারদের রোশানলে পরতে হয়েছে ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদকে।এত কিছুর পরেও জারিয়াবের বসানো পরিচালনা পর্ষদ জারিয়াবকে পুনরায় ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের পর্ষদ সুপারিশ বাংলাদেশ ব্যাংকে গত আগষ্ট মাসে প্রেরন করলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার বিরুদ্ধে জেনারেল শেয়ারহোল্ডারদের ও ডিপোজিটরদের ফান্ড তছরূপের অভিযোগ আমলে নিয়ে জারিয়াবের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের পর্ষদের সুপারিশ নাকোচ করে দেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে অজমত গ্রুপের ডিপোজিট আটকে রয়েছে। এটা ছাড় করাতেই আজমত গ্রুপের মালিকপক্ষ ড. আতাহার আলী ও আজমত রহমান বিভিন্ন যায়গায় সুপারিশ ও আর্থিক লেনদেনের শর্তে মোহাম্মদ আলী জারিয়াবকে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের পদে বসাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের কয়েকজন নারী সহকর্মীর করা যৌন হয়রানি, মাদক সেবনসহ বিকৃত যৌনাচারের মামলা চলমান রয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন মামলা চলমান রয়েছে যার নম্বর-১১৬৫/২০২২ এবং তার বিরুদ্ধে ঢাকার একের অধিক থানায় সাধারণ ডাইরি রয়েছে। তার পরেও তাকেই আবার বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে নতুন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগের পায়তারা ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য একটি অশুভ চক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ আলী জারিয়াব জনবাণীকে বলেন, অভিযোগ গুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো প্ররোচনা দেওয়া হয়নি দাবি করে, বাংলাদেশ কর্মাস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জনবাণীকে জানান, মোহাম্মদ আলী জারিয়াবকে তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি দ্বারা নির্বাচিত করা হয় এবং অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়। আমাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো প্ররোচনা দেওয়া হয়নি। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের কিছুই জানে না সার্চ কমিটি।








