Logo

ঝুকিপূর্ণ রেমা কালেঙ্গা ওয়াচটাওয়ার, আতঙ্কে পর্যটকরা

profile picture
উপজেলা প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ
২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৩৪
17Shares
ঝুকিপূর্ণ রেমা কালেঙ্গা ওয়াচটাওয়ার, আতঙ্কে পর্যটকরা
ছবি: প্রতিনিধি

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনভূমি রেমা-কালেঙ্গা। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে প্রতিদিনই ভিড় করেন প্রকৃতিপ্রেমী ও দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু অভয়ারণ্যের অন্যতম আকর্ষণ পাঁচতলা ওয়াচ টাওয়ারটি এখন কার্যত ‘মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় টাওয়ারটির পিলার ঝরছে, দেয়ালে ধরেছে ফাটল, একাধিক স্থানে বেরিয়ে এসেছে লোহার রড। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টাওয়ারে ওঠার মূল পথটি ঘন ঝোপঝাড়ে ঢেকে গেছে। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, কোনো পথে ওপরে উঠতে হবে। সিঁড়ির বিভিন্নস্থানে বড় বড় ফাটল, কোথাও আবার অংশ ভেঙে পড়ে আছে। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় রেলিংও নেই। ওপরের দিকে উঠতেই কাঠামোটি দুলছে এমন অনুভূতি প্রায় সকল পর্যটকই।

ভয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলেন পর্যটকেরা। সিলেট থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সায়েম আহমেদ বলেন, অনেকদিন ধরে রেমা-কালেঙ্গার টাওয়ারের কথা শুনে এসেছি। কিন্তু কাছে গিয়ে ভাঙা পিলার আর বের হওয়া রড দেখে আর ওপরে ওঠার সাহস পাইনি। মনে হচ্ছিল, একটু দমকা বাতাস এলেই ভেঙে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা হাফসা তানজীম বলেন, সিঁড়িতে পা রাখতেই পুরো টাওয়ারটা নড়ছে মনে হচ্ছিল। কোথাও ধরার মতো রেলিং নেই। বাচ্চাদের নিয়ে তো ওঠার প্রশ্নই আসে না।

আরেক পর্যটক হুমায়ুন কবির জানান, টাওয়ারে ওঠার পথই যখন খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন ধারণা করা যায় এর রক্ষণাবেক্ষণের অবস্থা কতটা নাজুক। এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা হলে কারা দায় নেবে। ১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর আয়তনের রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য কালেঙ্গা, রেমা, ছনবাড়ি ও রশিদপুর এই চার বিট নিয়ে গঠিত।

এখানে রয়েছে ৬০০-রও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম। হরিণ, বানর, চিতল, বনবিড়াল, হনুমানসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণীর আবাস এটি। বিরল প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখিরও অন্যতম আশ্রয়স্থল এই বন। এত গুরুত্বপূর্ণ ইকো ট্যুরিজম জোনের প্রধান আকর্ষণই যখন ঝুঁকিপূর্ণ, তখন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা এটিকে ‘চরম অব্যবস্থাপনাথ বলে মনে করছেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের অভিযোগ, বহুবছর ধরে অভয়ারণ্যের অবকাঠামো অবহেলায় পড়ে আছে, মধ্যবর্তী সময়ে সংস্কারের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, রেমা-কালেঙ্গা দেশে ইকো ট্যুরিজমে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে উঠতে পারত। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াচ টাওয়ার, অব্যবস্থাপনা ও দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ পর্যটকের আস্থা নষ্ট করছে। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে স্থানীয় অর্থনীতি ও পর্যটন সম্ভাবনায়।

চুনারুঘাটের স্থানীয় পর্যটনকর্মী মাসুদ রানা বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে। তাদের প্রথম প্রশ্ন টাওয়ারে ওঠা যাবে কি? অনেকেই ভয় পেয়ে ফিরে যায়। ভেঙে পড়লে বড় দুর্ঘটনা ঘটবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতদিনেও কেন সংস্কার হয়নি, তা আমরা বুঝতে পারি না।

বিজ্ঞাপন

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, রেমা-কালেঙ্গার পুরো পর্যটন কাঠামোই অবহেলায় আছে। টাওয়ারের এই অবস্থা বছরের পর বছর চলছে। কেউ গুরুত্ব না দেওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে।

পর্যটন উদ্যোক্তা নাসির উদ্দিন বলেন, যদি দ্রুত টাওয়ার সংস্কার না করা হয়, তাহলে পর্যটকরা অন্য গন্তব্য বেছে নেবে। একটি দুর্ঘটনা ঘটলে সারা দেশের পর্যটন খাতই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছি। টাওয়ারটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছি। সরেজমিনে দেখে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব।

জেবি/এসএ
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD