Logo

৭০ সালের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশে শীত

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৩৭
21Shares
৭০ সালের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশে শীত
ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যদি এখনই কমানো না যায়, তবে আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশের আবহাওয়া ব্যবস্থা নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—২০৪১ থেকে ২০৭০ সালের মধ্যে দেশের গড় তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে, আর শতাব্দীর শেষে এ বৃদ্ধি পৌঁছাতে পারে দেড় থেকে সাড়ে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত।

বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও নরওয়েজিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জলবায়ুর রিপোর্ট–২০২৫’ প্রকাশ করে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রতিবেদনের মূল অংশ উপস্থাপন করেন। এতে ভবিষ্যতের পাঁচ ধরনের জলবায়ু সম্ভাবনা ধরে আগামী ৭-৮ দশকের পরিবর্তন বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্ষার আগের তিন মাস—মার্চ থেকে মে—তাপপ্রবাহ হবে সবচেয়ে তীব্র। পশ্চিমাঞ্চলে ২০৭০ সালের মধ্যে একটানা ২০ দিন পর্যন্ত তাপপ্রবাহ থাকতে পারে, যা বর্তমান সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি। বর্ষাকালেও তাপপ্রবাহের হার তিন গুণ পর্যন্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকায় তাপমাত্রা বাড়ার প্রভাব আরও ভয়াবহ হতে পারে। অনুমান করা হচ্ছে—প্রতি বছর ঢাকায় অন্তত দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ আঘাত হানবে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাড়ে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’ হিসেবে বিবেচিত।

উত্তর, পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কিছু শৈত্যপ্রবাহ অবশিষ্ট থাকলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে শীত একেবারেই সরে যাবে। শতাব্দীর শেষে ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় মাত্র এক-দুই দিন শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ জায়গায় শীত পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৭০ সালের মধ্যে বর্ষার বৃষ্টি গড়ে ১১৮ মিলিমিটার এবং ২১০০ সালে ২৫৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি তীব্র হবে।

বিশ্বব্যাপী গড়ে যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বছরে ২.১ মিলিমিটার বাড়তে পারে, বাংলাদেশে তা ৫.৮ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। শতাব্দীর শেষে উপকূলীয় অঞ্চলের ১৮ শতাংশ এলাকা পানির নিচে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সুন্দরবনের ২৩ শতাংশ পর্যন্ত অংশ পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ।

বিজ্ঞাপন

তাপমাত্রা ও বৃষ্টি বাড়ায়— ফসল উৎপাদন কমে যেতে পারে, গবাদিপশুর রোগবালাই বাড়বে, লবণাক্ততায় মিঠাপানির উৎস সংকুচিত হবে, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, কলেরাসহ পানিবাহিত রোগ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং শ্রমিকদের বাইরে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বজলুর রশিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন থেমে যাবে না—তাই প্রস্তুতিও দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে। নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি উপকূলে সুরক্ষা ব্যারিয়ার, বাঁধ, আশ্রয়কেন্দ্র এবং আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের ওপর তিনি জোর দেন।

নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন কৃষি, স্বাস্থ্য, জ্বালানি থেকে শুরু করে নগরায়ণ—সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এ জন্য সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

২০১১ সাল থেকে নরওয়ে ও বাংলাদেশ যৌথভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছে। এবারের প্রতিবেদনে ভবিষ্যৎ জলবায়ুর সবচেয়ে বিস্তারিত পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়েছে বলে জানানো হয়।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD