Logo

মহেশপুরে খেজুর রসে মেতে উঠছে গ্রামীণ জনপদ

profile picture
উপজেলা প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ
১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪০
8Shares
মহেশপুরে খেজুর রসে মেতে উঠছে গ্রামীণ জনপদ
ছবি: প্রতিনিধি

বাংলার শীত মানেই খেজুর রসের মিষ্টি সুবাস, মাটির হাঁড়িতে ফুটতে থাকা গুড়ের ধোঁয়া আর ভোরের কুয়াশায় জমে থাকা মিষ্টি স্মৃতি। যদিও এখনো পুরোপুরি নেমে আসেনি শীত, তবুও ঝিনাইদহের মহেশপুরে তার আগমনী বার্তা স্পষ্ট।

বিজ্ঞাপন

উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে খেজুর রস সংগ্রহের তোড়জোড়। শীতের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার গাছিরা, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই ঐতিহ্যবাহী পেশা টিকিয়ে রেখেছেন।

উপজেলার যাদবপুর, নাটিমা, মান্দারবাড়িয়া, নেপা, স্বরপপুর, বাঁশবাড়ীয়া, আজমপুর, ফতেপুর, পান্তাপাড়া, এসবিকে ও কাজীরবেড় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এখন চলছে ব্যস্ততা। সকাল-বিকেল দা হাতে গাছিরা খেজুর গাছে চড়ে কেউ গাছ চাঁচছেন, কেউ গাছের মুখ মসৃণ করছেন, আবার কেউ বাঁশের নল তৈরি করছেন রস সংগ্রহের জন্য। কোথাও কাটা হচ্ছে গাছ, কোথাও শুকোতে দেওয়া হচ্ছে কাটা অংশ—সব মিলিয়ে শীতের আগমনে গ্রামীণ জীবনে নেমে এসেছে নতুন উদ্দীপনা।

বিজ্ঞাপন

গাছিরা জানান, খেজুর রস সংগ্রহ একটি সময়সাপেক্ষ ও দক্ষতার কাজ। প্রথমে ধারালো দা দিয়ে গাছের মাথা কেটে বের করা হয় সোনালী অংশটি, এরপর গাছটিকে ১২ থেকে ১৪ দিন বিশ্রাম দেওয়া হয়। পরে পুনরায় চাঁচ দিয়ে আরও ৭ থেকে ১০ দিন পর সেটি রস সংগ্রহের উপযোগী হয়। সবশেষে বাঁশের নল বসিয়ে শুরু হয় রস ঝরার প্রক্রিয়া—যা ভোরবেলা হাঁড়িতে জমে ওঠে সোনালী তরলে। তবে আগের মতো এখন আর নেই সেই সংখ্যক খেজুর গাছ বা অভিজ্ঞ গাছি। গ্রামে গাছের সংখ্যা কমছে, নতুন প্রজন্মও এই পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছে, ফলে অনেক গাছই আজ অব্যবহৃত পড়ে আছে।

মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, “খেজুর গাছ সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মকে গাছি হিসেবে প্রশিক্ষণ দিতে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। উপজেলা কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও উৎসাহমূলক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এতে গাছিদের মধ্যে আগ্রহ কিছুটা হলেও ফিরেছে।”

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে মহেশপুর উপজেলায় ৮২ হাজার ৩৫৩টি খেজুর গাছ রয়েছে। নভেম্বরের শুরু থেকেই এসব গাছ থেকে আহরিত হবে মিষ্টি রস, যা দিয়ে তৈরি হবে গুড়, পাটালি ও নলেন গুড়—দেশব্যাপী চাহিদাসম্পন্ন শীতকালীন পণ্য।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় গাছি ইন্তাজ আলী বলেন, “আমরা সারা বছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি। খেজুর রস শুধু জীবিকার উপায় নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের শিকড়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আবেগ।প্রতি বছরের মতো এবারও খেজুর রসের মৌসুমকে ঘিরে মহেশপুরে বইছে উৎসবের আমেজ। রাতভর গাছের নল থেকে টপটপ করে ঝরে পড়ছে রস, ভোরের কুয়াশায় হাঁড়ি নামাচ্ছেন গাছিরা, চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে মিষ্টি গন্ধ। সকালে গ্রামের আঙিনায় দেখা যায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী, গরম গুড়ের হাঁড়ি, আর খেজুর রসের গন্ধে ভরে থাকা এক মায়াবী পরিবেশ।

খেজুর রসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি ছোটখাটো অর্থনৈতিক চক্র। কেউ গাছ চাঁচে, কেউ রস সংগ্রহ করে, কেউ গুড় তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরে আসে, আবার মানুষ শীতের সকালে মিষ্টি রসের স্বাদে মেতে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

খেজুর রস কেবল এক পেয়ালা পানীয় নয়—এটি বাংলার শীতকালীন ঐতিহ্যের প্রতীক, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বহমান এক সাংস্কৃতিক পরিচয়। তাই শীত মানেই খেজুর রস—এ যেন বাংলার গ্রামীণ জীবনের মিষ্টি ও স্মৃতিমাখা অধ্যায়।

জেবি/এসএ
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD