মহাসড়কজুড়ে কলার হাট, প্রতি হাটে বিক্রি ১০ লাখ

বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার ৯ মাইল হাট যা শেরপুর উপজেলার কোল ঘেঁষে অবস্থিত, এখন পরিণত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম কলা ও সবজির পাইকারি হাটে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা–বগুড়া মহাসড়কের ওপর বসা এই ঐতিহ্যবাহী হাটে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। প্রতি হাটে বিক্রি হয় প্রায় ১০ লাখ টাকার কলা।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই ট্রাকভর্তি কলা নিয়ে হাটে ভিড় করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত সাজানো কলার সারি যেন এক রঙিন উৎসবের আবহ তৈরি করেছে।
বিজ্ঞাপন
বাজারে বিক্রি হচ্ছে জনপ্রিয় কয়েক জাতের কলা—অনুপম, অগ্নিশ্বর, অমৃতসাগর, জি-৯ ও চিনি চম্পা। কলাগুলো ধুয়ে পাকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতি কাইন কলা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
এই হাটে কলা আসে আশপাশের মকামতলা, নন্দিগ্রাম ও শেরপুর উপজেলা থেকে। এখানকার উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এই অঞ্চলের কলা, স্বাদে ও গুণে অনন্য।
স্থানীয় চাষিরা সরাসরি তাদের উৎপাদিত কলা নিয়ে আসেন হাটে, আর এখান থেকেই তা পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়—ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ নানা অঞ্চলে।
বিজ্ঞাপন
৪৮ বছর ধরে কলা ব্যবসা করছেন স্থানীয় কৃষক ছানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে এই হাটে আসতাম। এখনো প্রতি হাটে কলা বিক্রি করি। এখানকার দাম ভালো পাওয়া যায়—এখন প্রতি কাইন কলা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই অঞ্চলের মাটি কলা চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। অল্প খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায়, তাই এখন অনেকেই কলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’
বিজ্ঞাপন
কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, ৯ মাইল হাটের আশপাশের এলাকায় প্রতি একর জমি থেকে গড়ে ১২-১৫ টন/হেক্টর কলা পাওয়া যায়। উৎপাদিত এই কলার বেশিরভাগ অংশ বিক্রি হয় ৯ মাইল হাটে। অল্প খরচে ভালো ফলন পাওয়ায় কলা চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া জানান, ‘আমরা এখান থেকে পাইকারি দরে কলা কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। হাটের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতা–বিক্রেতায় বাজার থাকে জমজমাট।’
তবে মহাসড়কের ওপর হাট বসায় মাঝে মাঝে যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাটের দিনগুলোতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। এতে যাত্রী ও পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
বিজ্ঞাপন
শাহজাহানপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন শাওন বলেন, ‘উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়। কৃষকদের পানামা ও সিগাটকা রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা ও গাছের যত্নে গুরুত্ব দিতে বলা হচ্ছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আমরা পাশে আছি।’








