বগুড়ায় ফুলকপির কেজি দুই টাকা, কৃষকের চোখে নীরব জল

ভোরের কুয়াশা ভেদ করে যখন সূর্যের প্রথম আলো নামছে, তখন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ফুলবাড়ি পাইকারি সবজি হাট জেগে উঠেছে রঙ ও গন্ধের উৎসবে। সবুজে মোড়া মাঠজুড়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম আর নানা জাতের শাক দেখলে মনে হয় প্রকৃতি বুঝি তার সমস্ত দান উজাড় করে দিয়েছে এই বাজারে। ভ্যান, ট্রাক্টর আর ট্রাকের সারিতে সারিতে হাজির হচ্ছেন কৃষকরা ভালো দামের ক্ষীণ আশা বুকে নিয়ে।
বিজ্ঞাপন
হাটের কোলাহলে হারিয়ে যায় না কৃষকের দীর্ঘশ্বাস। এই সবুজ প্রাচুর্যের আড়ালেই লুকিয়ে আছে হতাশার এক নীরব গল্প। সবচেয়ে বেশি কাঁদাচ্ছে ফুলকপির দাম। রবিবার (২১ ডিসেম্বর) উপজেলার ফুলবাড়ি হাটে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। কেজিপ্রতি হিসাব করলে যা দুই টাকার কাছাকাছি যেখানে উৎপাদন খরচই পড়েছে পাঁচ থেকে সাত টাকা।
এক সময় যে ফুলকপি ছিল স্বপ্নের ফসল, এখন সেটিই কৃষকের গলার কাঁটা। কৃষক রফিকুল ইসলাম আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন, “এক মাস আগেও মণপ্রতি দাম ছিল দুই হাজার টাকার ওপরে। দিন দিন কমতে কমতে আজ এই অবস্থা। পরিবহন খরচ তো দূরের কথা, ক্ষেতের শ্রমের দামও উঠছে না।” কথার ফাঁকে ফাঁকে থেমে আসে তার কণ্ঠ লোকসানের অঙ্ক যেন চোখের সামনে ভাসে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর শীতকালীন সবজির ফলন হয়েছে বেশি। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়েছে, কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনা ও মজুদের সুবিধা বাড়েনি। ফলে কৃষক বাধ্য হচ্ছেন টাটকা সবজি যেকোনো দামে বিক্রি করতে। গত দুই সপ্তাহ ধরে শুধু ফুলকপি নয়, প্রায় সব শীতকালীন সবজির দামেই নেমেছে একই রকম ধস।
অনেক কৃষকই বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী মৌসুমে ফুলকপি চাষে আর ফিরবেন না তারা। ন্যায্য দাম, সরকারি সহায়তা আর আধুনিক মজুদ ব্যবস্থার অভাবে শীতের এই সবুজ উৎসব ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে কৃষকের দীর্ঘশ্বাসে ভেজা এক বাস্তবতায়।
বিজ্ঞাপন








