নৌ-বাহিনীর ‘পাইওনিয়ার ফোর্স’ স্বীকৃতি চাইলেন নৌ-কমান্ডোরা

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর কোনো নিয়মিত ইউনিট না থাকায় নৌ-কমান্ডোরাই সমুদ্র ও নদীপথে যুদ্ধ করে বিজয়ের পথ প্রশস্ত করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে নৌ-কমান্ডোদের বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর ‘পাইওনিয়ার ফোর্স’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডোরা।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো অ্যাসোসিয়েশনের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে বক্তারা জানান, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্টের ঐতিহাসিক ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ২৬টি জাহাজ ডুবিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নৌযোগাযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। পুরো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নৌ-কমান্ডোদের অভিযানে প্রায় ১২৬টি জাহাজ ধ্বংস করা হয়।
বিজ্ঞাপন
তারা বলেন, এই অসামান্য অভিযানের স্মরণে প্রতিবছর ‘অপারেশন জ্যাকপট দিবস’ হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি দিয়ে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
বক্তারা আরও দাবি জানান, নৌ-কমান্ডোদের নামেই দেশের অন্তত একটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি নৌঘাঁটির নামকরণ করা হোক। পাশাপাশি ঢাকায় তাদের জন্য একটি স্থায়ী অফিস নির্মাণে সরকারি জমি বরাদ্দের আহ্বান জানান তাঁরা, যাতে চিকিৎসা ও প্রশাসনিক কাজে রাজধানীতে আগত সদস্যরা প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে পারেন।
নৌ-কমান্ডোরা বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন সময় তাদের কার্যক্রম ছিল গোপনীয়। সিনিয়র অফিসারের অভাব ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় তাদের অনেকের অবদান মূল্যায়ন হয়নি। অনেকেই আজও প্রচারবিমুখ ও অবহেলিত জীবনে দিন কাটাচ্ছেন, কেউ কেউ চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও রাষ্ট্রীয় জরুরি কারণে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি লিখিত বার্তায় নৌ-কমান্ডোদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “অপারেশন জ্যাকপটসহ নৌ-কমান্ডোদের দুঃসাহসিক অভিযান মুক্তিযুদ্ধের সামরিক ও কৌশলগত সফলতার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাদের বীরত্ব যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিয়েছে ও স্বাধীনতার পথ ত্বরান্বিত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “নৌ-কমান্ডোদের সাহসিকতা জাতির গৌরবের প্রতীক। একজন যোদ্ধা আমৃত্যু যোদ্ধা—এই বিশ্বাসই আমাদের প্রেরণা। মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শে আমরা যুদ্ধ করেছি, সেই সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের দায়িত্ব আজও শেষ হয়নি।”
বিজ্ঞাপন
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান কবির বীর প্রতীক। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীরসহ বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।