আইনাঙ্গনে আলোচনার ঝড়, কে হচ্ছেন পরবর্তী ২৬তম প্রধান বিচারপতি

দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আগামী ২৭ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন। তার অবসর ঘনিয়ে আসায় দেশের আইনাঙ্গনে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা—কে আসছেন দেশের পরবর্তী তথা ২৬তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিতে? জ্যেষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা, ইতিহাস—সবকিছু মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আপিল বিভাগের কয়েকজন বিচারপতি।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রয়েছেন ছয়জন বিচারপতি। তারা হলেন—বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
এদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে প্রথম দুইজন—বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী—কে নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে। আইনজীবী মহল মনে করছেন, তাদেরই একজন দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পেতে পারেন।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে সংবিধান যা বলে
বিজ্ঞাপন
সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে। ৯৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে—রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেবেন এবং তার সঙ্গে পরামর্শ করে অন্যান্য বিচারক নিয়োগ করবেন।
রীতি অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ব্যতিক্রম ঘটেছিল ২৫তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সময়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদকে সরাসরি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার—যা বিচার বিভাগে এক নতুন নজির।
বিজ্ঞাপন
এবার পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল। তাই আইনবিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রচলিত রীতি অনুযায়ীই আপিল বিভাগ থেকেই পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বর্তমান সংবিধানে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যেকোনো বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বেছে নিতে পারেন। তবে দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত রীতি হিসেবে জ্যেষ্ঠতাই সাধারণত প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য মাসদার হোসেন জানান, কমিশনের সুপারিশেও বলা হয়েছিল—আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি করা উচিত। তবে গুরুতর অভিযোগ থাকলে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
জ্যেষ্ঠতার শীর্ষে যারা

বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম: ১৯৫৯ সালের ১৫ জুলাই জন্ম। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম নুরুল ইসলামের পুত্র এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি জাহানারা আরজুর সন্তান। ১৯৮৩ সালে আইন পেশায় যাত্রা শুরু। ২০০৩ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি, ২০০৫ সালে স্থায়ী বিচারপতি এবং ২০২২ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী: ১৯৬১ সালের ১৮ মে জন্ম। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এএফএম আবদুর রহমান চৌধুরীর পুত্র। ১৯৮৫ সালে আইন পেশায় প্রবেশ। ২০০৩ সালে হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ এবং ২০২৪ সালের আগস্টে আপিল বিভাগে উন্নীত হন।
বিজ্ঞাপন
বিচারপতি মো. রেজাউল হক: ১৯৬০ সালের ২৪ এপ্রিল জন্ম। ১৯৮৪ সালে আইনজীবী হিসেবে যাত্রা শুরু। ২০০৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০২৪ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক: ১৯৬৩ সালের ৭ নভেম্বর জন্ম। ১৯৯০ সালে আইনজীবী হিসেবে শুরু। ২০০৪ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০২৪ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিজ্ঞাপন
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান: ১৯৬৯ সালের ১ মার্চ জন্ম। ১৯৮৩ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় প্রবেশ। ২০০৩ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০২৫ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব: একুশে পদকপ্রাপ্ত আইনজীবী ও সাবেক মন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের মেয়ে। ১৯৯২ সালে আইন পেশায় যাত্রা শুরু। ২০০৪ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক এবং ২০২৫ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হন।
সবশেষে প্রশ্ন একটি—কাকে বেছে নেবেন রাষ্ট্রপতি?
বিজ্ঞাপন
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পুরোপুরি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তবে আইনাঙ্গনে যেভাবে আলোচনা চলছে, তাতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতির মধ্যেই নতুন প্রধান বিচারপতি নির্ধারিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত। সবার দৃষ্টি এখন বঙ্গভবনের দিকে—রাষ্ট্রপতি কাকে দেশের সর্বোচ্চ বিচারীয় দায়িত্ব তুলে দেবেন, সেটিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।








