Logo

মুখ চেপে ধরার কারণ ট্রাইব্যুনালে ব্যাখ্যা করলেন আসামি আরশাদ

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৬:৩৫
47Shares
মুখ চেপে ধরার কারণ ট্রাইব্যুনালে ব্যাখ্যা করলেন আসামি আরশাদ
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় শাহবাগ ও চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি এবং শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন সাফাই সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। এটি প্রথমবারের মতো কোনো আসামি পক্ষের সাক্ষী হিসেবে এই মামলায় হাজির হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের সামনে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

জবানবন্দিতে আরশাদ জানান, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি সরকারি আদেশ ও নির্দেশ মেনে দায়িত্ব পালন করেছেন। শাহবাগ মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং থানার এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলদের দায়িত্ব বণ্টন করা তার দায়িত্ব ছিল।

তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ ফোর্স সময়মতো পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি। জুলাই বিপ্লব আন্দোলনের সময়ে ২০-২২ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেছি।

বিজ্ঞাপন

আরশাদ বিস্তারিত উল্লেখ করে বলেন, ৩১ জুলাই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে শাহবাগ মোড়ে সকাল ৯টায় দায়িত্বে নিয়োজিত হই আমি। বেলা ১১টায় ওয়্যারলেসে (আলফা মাইক ২১১) আমাকে হাইকোর্ট মাজার গেটের সামনে আসতে বলেন এডিসি আখতার স্যার। হাইকোর্ট মাজার গেটের সামনে এসে যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, ডিসি রমনা আশরাফ হোসেন, এডিসি আখতার স্যার, এসি ইমরুল স্যার, ওসি মোস্তাজিরুর স্যারসহ সবাইকে উপস্থিত দেখি। আমাদের এখানে এক প্লাটুন ফোর্স অর্থাৎ ২০ জন পুলিশ সদস্যকে ব্রিফ করেন ডিসি (রমনা) আশরাফ হোসেন স্যার। এর মধ্যে এসি ইমরুল স্যারের নেতৃত্বে আরও ২০ জন ফোর্স সেখানে আসে। দুপুর ১২টার দিকে চারদিক থেকে সরকারবিরোধী ও পুলিশের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। কোনোভাবেই আন্দোলনকারীদের হাইকোর্ট গেটের সামনে আসতে দেওয়া যাবে না বলে আমাদের জানান ডিসি স্যার ও যুগ্ম কমিশনার স্যার। 

তিনি আরও বলেন, ওই সময় প্রেসক্লাবের দিক থেকে মিছিল করতে করতে হাইকোর্টের মাজার গেটের দিকে আসতে থাকেন ২০০-২৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী। ১০০-১৫০ জনের আরেকটি মিছিল শিক্ষা ভবনের দিক থেকে আসতে থাকে। তখন আমি ও এসি ইমরুল স্যার মিলে ফোর্স নিয়ে বাধা দিলে তারা থেমে যান। কিন্তু প্রেসক্লাবের দিক থেকে আসা মিছিলটি আমাদের বাধা উপেক্ষা করে হাইকোর্টের গেটের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। একইসঙ্গে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়- ‘ফুটফুটে সুন্দর আসছে’। কয়েকজন মেয়ে আমাকে লক্ষ্য করে মাটির দিকে থুতু নিক্ষেপ করে। এতে আমরা উত্তেজিত হয়ে দুজন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করি। তারা প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে পরিচয় দেন। পরে বলে খিলগাঁও মডেল কলেজের ছাত্র। আমি বলি মিথ্যা কথা বলছো কেন? তখন সে উত্তেজিত হয়ে জোরে জোরে কথা বলতে থাকলে আমি বাম হাত উঁচিয়ে চুপ থাকতে বলি। এছাড়া তার বেল্ট ধরে নিয়ে গাড়িতে উঠাই। পরে জানতে পারি তার নাম নাহিদ। মাজার গেটের সামনে এলে আরও কিছু আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা আমার ইউনিফর্ম ধরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে পেছনের দিকে নিয়ে যান।

এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

আরশাদ জবানবন্দিতে আরও উল্লেখ করেন, আন্দোলন চলাকালীন তিনি কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেননি, কাউকে গুলি বা আহত করেননি, এবং কাউকে হত্যা বা আহত করার নির্দেশ দেননি।

তিনি বলেন, যদি আমি অপরাধে জড়িত থাকতাম, তবে পরবর্তী পাঁচ মাস কর্মস্থলে না থেকে পালিয়ে যেতাম। আমি সকল দায়িত্ব আইন অনুযায়ী পালন করেছি।

তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন যে, পুলিশের ফোর্স, শাখা কর্মকর্তা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে তিনি শাহবাগ ও চানখাঁরপুল এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এছাড়া সামাজিক ও মানসিক ক্ষতির বিষয়ে বলেন, কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার কারণে তার মানহানি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই জবানবন্দি মামলার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছে—আন্দোলন চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের প্রতিক্রিয়া এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD