বিদায়ী অভিভাষণে যা বললেন প্রধান বিচারপতি

দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আগামী ২৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসর গ্রহণের আগে রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে দেওয়া বিদায়ী অভিভাষণে বিচারকদের রাষ্ট্র ও ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
বিজ্ঞাপন
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের অনেক অভিমত রাষ্ট্র ও ইতিহাসের গতিপথে অসামান্য প্রভাব ফেলে। এটি অস্বীকার করা যায় না যে, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্বে বিচার বিভাগ কখনও অসাংবিধানিক ক্ষমতা, অপশাসন ও রাষ্ট্রীয় কপট কৌশলের সহায়ক হিসেবেও কাজ করেছে। দুঃশাসনের বলয়কে আবরণ করেছেন কিছু বিচারক, অন্যায় ও অবিচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এ ধরনের নৈতিক বিচ্যুতি জনগণকে অতীতে গণঅভ্যুত্থানের পথে এগোতে বাধ্য করেছে।
বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জ্ঞান অর্জন ও পাঠাভ্যাসকে জীবনের পরম দায় হিসেবে গ্রহণ করুন। কেবল কর্মসম্পাদন নয়, বরং কর্মের উৎকর্ষ অন্বেষাই হোক আমাদের প্রচেষ্টার মূল ভিত্তি। সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাষ্ট্রচিন্তা এবং আধুনিক প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিবেশ-বিজ্ঞান, সাইবার নিরাপত্তা—এমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচরণ করুন। কারণ একজন বিচারক কখনও নিশ্চিত থাকতে পারেন না কখন কোন ঘটনা আদালতের দ্বারস্থ হবে।
বিজ্ঞাপন
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ঐতিহাসিক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনগণের জন্য দ্রুত সুবিচার নিশ্চিত করতে প্রতিটি বিচারককে শতভাগ দায়বদ্ধ থাকতে হবে এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে থাকতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, আইন রাজনীতির অংশ হলেও বিচারকদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকার প্রয়াস থাকতে হবে। কেবল ক্ষমতাবান শাসক শ্রেণির জন্য পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব নিলে বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তি রক্ষার জন্য বিচারকদেরকে সততা ও সুবিবেচনার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
এই সমাপনী অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, দেশের সকল জেলার জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।








