জানাজার জন্যে লাশও নিতে হয় দেওয়াল টপকে


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


জানাজার জন্যে লাশও নিতে হয় দেওয়াল টপকে

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: যাদের জমি দিয়ে হাসপাতাল তৈরি সেই মানুষগুলোর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে হাসপাতাল। চলাচলের রাস্তা না থাকায় কমপক্ষে ৫০টি পরিবারের সদস্যদের বছরের পর বছর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়াল টপকে চলাচল করতে হয় বলে জানা গেছে। এমনকি ওই এলাকায় কেউ মারা গেলে জানাজার জন্যে তার লাশও নিতে হয় দেওয়াল টপকে। ঘটনাটি ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভান্ডাব সিলমাপাড়ার।  

স্থানীয়রা জানান, সিলমাপাড়ার বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী রাবিয়া খাতুন গতকাল বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বিকালে মারা যান। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে জানাজার জন্যে রাবেয়া খাতুনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানা দেয়াল টপকে। 

ওই সময় রাবেয়া খাতুনের ভাই আছমত আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে উপস্থিত মুসল্লিদের জানান, রাস্তা না থাকায় তার বোনের লাশ আনতে হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাচীরের ওপর দিয়ে। তার দাবি, ওই হাসপাতালের জন্য তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রায় দেড় একর জমি দিয়েছেন। অথচ এখন তাদের চলাচল করার মতো কোনো রাস্তা নাই। তার মা-বাবা ও চাচাদের লাশও জানাজার জন্যে এভাবেই হাসপাতালের দেয়াল টপকে আনতে হয়েছে। চলাচলের রাস্তার না থাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে তাদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চলাচলের জন্য একটু রাস্তা করে দেয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। 
 
ওই সময় জানাজায় উপস্থিত সাবেক মেম্বার আবুল কালাম আজাদ জানান, রাস্তার অভাবে সিলমা আবাসিক এলাকার প্রায় ৫০টির মতো পরিবারের কয়েকশত মানুষ দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের দেয়াল টপকে অবর্ণনীয় কষ্ট করে আসা-যাওয়া করছেন। রাস্তার জন্য আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।  

এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম জানান, রাস্তার অভাবে সিলমাপাড়ার কয়েকশত মানুষ বছরের পর বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেনস। তাদের দৈনন্দিন জীবনের যাতায়াত হাট-বাজার, আসবাবপত্র, খাদ্যসামগ্রি সবকিছুই বহন করতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেওয়াল টপকে। স্থানীয় মহল্লার মসজিদের ইমাম শাহজাহান মিয়া জানান, তিনি ২৬ বছর ধরে এখানে ইমামতি করছেন। রাস্তা না থাকায় এ মহল্লায় কয়েকশত মানুষের চলাচলের দুরাবস্থা দেখে তিনি খুবই মর্মাহত। মানুষ মারা গেলে প্রাচীর টপকিয়ে লাশ আনা নেওয়া করতে হয়।  

পৌর মেয়র ডা. এ কে এম মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ুম বলেন, ওই মহল্লার মানুষের চলাচলের রাস্তা করার জন্যে অনেকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জায়গা না পাওয়ায় রাস্তা করা সম্ভব হয়নি।

এসএ/