‘আমাকে ভালো থাকতে বলে নিজেই চলে গেল না ফেরার দেশে’

মাত্র এক মাস আট দিন আগে সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্পোরাল মাসুদ রানা। বুক ভরা স্বপ্নে দেশ ফিরে বাবার পৈতৃক ভিটায় গড়ে তুলবেন একটি আধুনিক বাড়ি। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার আগে বিদেশের মাটিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিভে গেল তার জীবনপ্রদীপ। এই হামলায় ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে তার পরিবারের স্বপ্ন ও আশা।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় শহীদ হন মাসুদ রানা। তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার আরবাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের বড় ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই মাসুদ সংসারের হাল ধরেছিলেন। নিজের স্বপ্নের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে ছোট দুই ভাই মনিরুল ইসলাম ও রনি আলমকে গড়ে তুলেছেন। দীর্ঘদিন নিজের পছন্দের স্বপ্ন — পৈতৃক ভিটায় আধুনিক বাড়ি নির্মাণ — স্থগিত রেখে তিনি দেশের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত অবস্থায় সুদানে যাওয়ার সুযোগ পেলে নতুন আশা নিয়ে বুক বাঁধেন।
বিজ্ঞাপন
গত ৭ নভেম্বর স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি ও আট বছরের কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে বিদায় জানিয়ে সুদানে পাড়ি জমান মাসুদ। কিন্তু কে জানত, মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় দেশের পতাকাই হবে তার শেষ পোশাক।

মাসুদের মৃত্যুর খবর প্রথম জানেন ছোট ভাই সেনাসদস্য রনি আলম। খবরটি গ্রামে পৌঁছাতেই বোয়ালিয়াপাড়া শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। শহীদ মাসুদের বাড়িতে এখন কান্না ও আহাজারি ছাড়া কিছু দেখা যায় না।
ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন শহীদ মাসুদ রানার মা মর্জিনা খাতুন। তিনি কান্না ভেঙে বলেন, ভবিষ্যতের জন্য আমার ছেলে কিছুই রাখেনি। দেশে ফিরে একটি সুন্দর বাড়ি করবে বলেছিল। গতকাল কথা হলো, সে বলল—‘মা, এখন আর কষ্ট নেই, ডিউটি কম।’ আমাকে ভালো থাকতে বলেছিল, কিন্তু নিজেই না ফেরার দেশে চলে গেল।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেশীরা জানান, মাসুদ রানা ছিলেন শান্ত, মিশুক এবং গ্রামের মানুষের কাছে গর্বের নাম। তার আকস্মিক মৃত্যু গ্রামের মানুষ সহজে মেনে নিতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: চলনবিলে কচুরিপানা এখন কৃষকদের বুকে কাটা
রবিবার বিকেলে শহীদ মাসুদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন নাটোর স্টেডিয়াম সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, শহীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এছাড়া, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
লালপুর উপজেলা প্রশাসনও শহীদ পরিবারের পাশে থাকার এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের কথা জানিয়েছে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ।








