পর্নোগ্রাফি মামলায় কলেজ অধ্যক্ষ ও ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পর্নোগ্রাফি মামলায় কলেজ অধ্যক্ষ ও ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে

দিরাই প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রাজরানী চক্রবর্তী কর্তৃক দায়েরকৃত পর্নোগ্রাফি মামলায় আপন  দুই ভাই কলেজ অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস ও ইউপি চেয়ারম্যান রঙ্গলাল চন্দ্র দাসকে জেল হাজতে প্রেরন করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুর রহিম।

আদালত সূত্রে জানাযায়, ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বিবিয়ানা মডেল কলেজ এর বহুল আলোচিত অধ্যক্ষ উপজেলার ভাইটগাঁও নিবাসী নগেন্দ্র দাস এর ছেলে  নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস এর নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে দিরাই উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রাজরানী চক্রবর্তীর সাথে তার ৮ মিনিট ৪ সেকেন্ডের অশ্লীল ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে  ভাইরাল হয়।

এই দিন দুপুরের পর থেকে বিবিয়ানা কলেজ এলাকার বাসীন্দাদের একাধিক ফেসবুক আইডি হতে অধ্যক্ষের নানা অপকর্মের ফিরিস্তিসহ ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হতে থাকে। এর পর দেশ-বিদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীসহ উপজেলার সর্বত্র তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে। সন্ধ্যা নাগাদ সচেতন মহলে নানা গুঞ্জন সহ অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।

একই ভাবে কলেজ অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস এর আপন ভাই নবীগঞ্জ উপজেলার বড় বাখৈর ইউনিয়ন পরিষদ এর  চেয়ারম্যান রঙ্গলাল দাস তার আইডি থেকে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রাজরাণী চক্রবর্তী ও সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর ছবি এডিট করে ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন। পৃথক এ দুটি ঘটনায় রাজরানী চক্রবর্তী দিরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও তৎকালীন ওসি অভিযোগ  গ্রহণ না করে আদালতে যেতে বলেন। পরে তিনি আদালতে পর্নোগ্রাফি আইনে পিটিশন দাখিল করেন।

আদালতের নির্দেশে দীর্ঘ তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি বিগত ২০২১ সালের  ১৮ ই অক্টোবর তারিখে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর থেকে  আসামি নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস ও রঙ্গলাল চন্দ্র দাস  দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গতকাল ২৪ শে জানুয়ারী ২০২২ ইং তারিখে সুনামগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এর আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। দুই পক্ষের আইনজীবীদের তর্ক-বির্তকের পর আদালতের  বিচারক আব্দুর রহিম আসামীদের  জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক পসিকিউর সোহেল আহমেদ।

এ ব্যাপারে জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ ইকবাল বাহার জনবাণীকে বলেন, আদালতের নির্দেশে  বাদীনির মামলাটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুই আসামি অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র দাস ও তার ভাই চেয়ারম্যান রঙ্গলালের বিরুদ্ধে বিগত ২০২১ সালের  ১৮ ই অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করি। আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন আদালত এর বিচারক।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানাযায়, দিরাই উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রাজরানী চক্রবর্তীর সাথে ৭-৮ বছর আগে অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস এর  পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইউপি সদস্য থাকাকালীনই অধ্যক্ষের প্ররোচনায় স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয় রাজরানী চক্রবর্তীর। এক পর্যায়ে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সিলেট শহরে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে বাসা ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করেন নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস । তবে এই অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেননি রাজরানীর স্বামী দুই সন্তানের জনক মধূসুদন চক্রবর্তী। মধুসূদন চক্রবর্তী। এক পর্যায়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়েন। অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র দাসের প্ররোচনায় স্ত্রী রাজরানী চক্রবর্তী কর্তৃক দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে মধূসুদন চক্রবর্তী  দীর্ঘদিন হাজতবাস করেন। এ নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন সময় একাধিক সালিশ বৈঠক হয়। বিষয়টি নিয়ে রাজরানীর স্বামী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে বিচারপ্রার্থীও হন। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে অধ্যক্ষের সখ্যতা থাকায় কোনো সমাধান হয়নি।

এসএ/