ত্রিশালে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে শাপলা বিল


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ত্রিশালে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে শাপলা বিল

এক কুল থেকে আরেক কুলে শাপলা ফুলের সৌন্দর্যে সেজেছে নতুন সাজে বিশাল চেচুয়া বিল। হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছে শাপলা ফুলের বাহারি রকমে ফুটে উঠা ফুল দেখতে। অপরুপ মায়ার বাধনে  যেন সব সৌন্দর্যের ডানা মেলে রাঙ্গিয়ে রেখেছে। সূর্য উদয়ের সাথে সাথে অপরুপ সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য ছুটে আসছে দুর দূরান্ত থেকে জাতীয় ফুল শাপলা প্রেমী দর্শনাথীরা। চেচুয়া বিলের তীরে বসে যেন ফুল প্রেমীদের মিলন মেলা। বিলে  সাতড়িয়ে শাপলা ফুলের সাথে নিবীড় প্রেমে আবদ্ব হচ্ছে কিশোররা। ঝলমলে সূর্যের আলোয় যেন রাঙ্গিয়ে উঠে শাপলা বিল।

ময়মনসিংহ শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে বিশাল চেচুয়া বিল যার মধ্যে রয়েছে ৫০ একর জমি এখন সবার মুখেই শাপলা বিল নামে পরিচিত। এ বিলে  লাল, সাদা, হলুদ, বেগুনী রংয়ের লাখো শাপলা দেখতে সূর্য উদয় থেকে শুরু করে সুর্যাস্ত পর্যন্ত   মানুষের ঢল নামে।

এ চেচুয়া বিল এখন সবাই শাপলা বিল নামে চেনেন। এ বিলকে এখন মানুষের ঘুরার জন্য অঘোষিত পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এ বিলের শাপলা ফুল সহজে উপভোগ করার জন্য স্থানীয়রা হরেক রকম সৌন্দর্যে নৌকা তৈরী করেছেন। যে কেউ আসলে একবার হলেও বিলের শাপলা অবলোকন করতে মন নাড়া দিবেই।

এ শাপলা বিল দেখতে প্রতিদিন কাকা ডাকা ভোর থেকে শুরু হয় পর্যটকদের আনাগোনা। সকল শ্রেণিপেশার মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, সরকারি আনন্দ মোহন বিশ^বিদ্যালয় কলেজ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ শাপলা বিলের সুন্দর্য দেখতে ভিড় জমান।

গত দুই বছর আগে যে বিলের পানি ও মাটিতে সর্ব রোগের ওষুধ জেনে হাজারও লোকের ভিড় জমেছিল সে বিলেই ফোটা লাখো শাপলা দেখতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মানুষের ঢল থাকে। 

শাপলা বিলের পাশেই গড়ে উঠেছে হরেক রকম দোকানসহ খাবারের দোকান। বিলের মাঝখানে বাশের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। যেখান থেকে শাপলার সৌন্দর্য কাছ থেকে উপভোগ করা যাবে। বিলের মধ্যে দর্শনার্থীদের ঘুরার জন্য নতুন করে সাজানো হয়েছে নৌকা।

ময়মনসিংহ শহর থেকে ঘুড়তে আসা  কুয়াশা-মৌ দম্পত্তি জানান, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও অনেকের কাছে শুনে শাপলার সুন্দর্য দেখতে আসছি। নৌকা দিয়ে পুরো বিলটা ঘুরে দেখে অনেক আনন্দ লাগছে। বাচ্চারাও বায়না ধরেছিল এখানে এসে কাছ থেকে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরেছি। এ এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসাবে ঘোষনা করা যেতে পারে।

কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী জানান, গত বছর প্রথম আমরা আমাদের সহপাঠির মাধ্যমে এ শাপলা বিলের কথা জানতে পারি। তখনও এসে ছিলাম। কিন্তু তখনকার থেকে এখন শাপলার পরিমান অনেক বেশী। কয়েক রংয়ের শাপলা ফুল ফুটে আছে। সকালের প্রথম সূর্যে শাপলা ফুলে পড়ে আরও সুন্দর্য বৃদ্ধি করে। শিতের সকালের কুয়াশা ও সূর্যের আলোর মিশ্রনে এ শাপলা বিল আরও অনেক সুন্দর হয়ে ফুটে উঠে। শিতকাল আসলে আমরা আবার আসবো।

সারাদেশের মানুষ এ বিলকে চিনেছে একটি অলৌকিক ঘটনার গুজবকে কেন্দ্র করে। একদিন রাত পেরিয়ে সকাল হতেই কিছু লোক দেখতে পায় সেখানে থাকা জমাট বাধা কচু হঠাৎ সরে গিয়ে অনেকটা জায়গা ফাঁকা হয়েছে। এটাকে অলৌকিক ভেবে কয়েকজন এখানে গোসল করে ও এর পানি খেয়ে রোগ থেকে মুক্ত হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশের হাজার হাজার মানুষ এই কাঁদা মাখা পথ পেরিয়ে কাঁদা মাখা পানিতে গোসল, গড়াগড়ি ও কাদাযুক্ত পানি সংগ্রহ করতে ভিড় করতে থাকে। 

এমন গুজবও ছড়ানো হয়েছিল বিলের পানিতে এক ডুবেই সেরে যাবে যেকোনো রোগ। এখানকার মাটি ও পানি নাকি সর্বরোগের ওষুধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজবে হাজারো মানুষের তথাকথিত তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছিল এ চেচুয়া বিল। ঐসময় উপজেলা প্রশাসন, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে চেচুয়া বিলের পানি, মাটি, কচুরিপানা ব্যবহার না করার জন্য প্রথমে মাইকে আহ্বান জানান। 

আরএইচ/