ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ড্রাগন
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, ২০শে অক্টোবর ২০২২
ড্রাগন এক ধরনের ফণিমনসা বা ক্যাকটাস প্রজাতির ফল। এই ফলের উৎস মেক্সিকো হলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ফলটি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। দামে অন্যান্য ফলের তুলনায় এই ফলটি একটু বেশি হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ড্রাগন, হজমে সহায়তা করা এবং রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
১) পুষ্টিগুণে অনন্য
ড্রাগন উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। ফলটিতে রয়েছে স্স্বুাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ। তুলনামূলকভাবে এর ক্যালরি মাত্রাও অনেক কম। এতে যথেষ্ট পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার রয়েছে। ২২৭ গ্রাম ড্রাগন ফলে ক্যালোরির মাত্রা ১৩৬, প্রোটিনের মাত্রা ৩ গ্রাম, ফ্যাটের মাত্রা শূন্য, ফাইবারের মাত্রা ৭ গ্রাম, আয়রনের মাত্রা ৮ শতাংশ, ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা ১৮ শতাংশ, ভিটামিন-সি এর মাত্রা ৯ শতাংশ, ভিটামিন-ই এর মাত্রা ৪ শতাংশ।
২) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
শরীরকে সুস্থ ও দূষণমুক্ত রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ড্রাগনে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং বিটাসায়ানিন-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই প্রাকৃতিক পদার্থগুলো আপনার কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল হচ্ছে এক ধরনের অণু যা ক্যান্সার এবং অকাল বার্ধক্যের মতো রোগের কারণ হতে পারে।
৩) ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
ড্রাগনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এই ফলটি নিয়মিত খেলে রক্তে শর্করার ভারসাম্যতা বজায় থাকে।
৪) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
এই ফলের মধ্যে ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এটি কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। তাছাড়া এই ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতেও সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অ্যালজাইমার ও পারকিনসন-এর মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
৫) হজমের জন্য ভালো
এটি শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যে কারণে হজম ক্ষমতাও ভালো হয়। তাছাড়া এটি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজম স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
৬) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
ড্রাগনের ক্ষুদ্র কালো বীজগুলো ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এগুলো হার্টের জন্য খুবই ভালো এবং কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ-এর ঝুঁকি কমায়। তাই ড্রাগন খাওয়া হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারি। হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি, রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।
৭) বার্ধক্যের লক্ষণগুলো প্রতিরোধ করে
অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, চাপ, দূষণ এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে অকাল বার্ধক্যের সমস্যা আজ খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রাগন ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ হওয়ায়, এটি ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলতে সহায়তা করে। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে, দিনে একবার এর জুস খেতেই পারেন। এছাড়া এটি চুলের জন্য খুব উপকারি।
৮) হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি
ড্রাগনে প্রায় ১৮ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম বর্তমান, যা হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে এবং হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ফলে জয়েন্টের ব্যথা, ফ্র্যাকচার কিংবা ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিও অনেকটাই কমে যায়।
৯) চোখের জন্য উপকারি
এ ফলে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে। তাই, এই ফল চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন - ছানি পড়ে যাওয়া এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
১০) গর্ভবতী মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যকর
এতে ভিটামিন বি, ফোলেট ও আয়রন রয়েছে, তাই এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আদর্শ ফল। ভিটামিন বি এবং ফোলেট জন্মগত ত্রুটি রোধ করতে সহায়তা করে এবং গর্ভাবস্থায় শক্তি সরবরাহ করে। তাছাড়া এতে থাকা ক্যালসিয়াম ভ্রূণের হাড়ের বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এতে ম্যাগনেসিয়ামও রয়েছে, যা মহিলাদের পোস্টমেনোপজাল জটিলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
জেবি/ আরএইচ/