প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় অপরাধী আশরাফুলের সহজ স্বীকারোক্তি


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০:২৪ অপরাহ্ন, ২২শে অক্টোবর ২০২২


প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় অপরাধী আশরাফুলের সহজ স্বীকারোক্তি
ছবি: জনবাণী

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধলরাহচন্দ্র ইউনিয়নের ডাউটিয়া গ্রামের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এঘটনায় তদন্ত শেষে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাসের নাম জড়িয়ে পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিন্তিত করে গত ১৬ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। এঘটনায় ধলরাহচন্দ্র ইউনিয়নসহ উপজেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। 


এ ঘটনার পরিপেক্ষিতে ১৯ অক্টোবর(বুধবার) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ(সংখ্যালঘু ও নিপীড়িত মানুষের মুখপাত্র) এর চেয়ারম্যান রবীন্দ্র ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। 


এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পলাশ ঘোষ, ডিএসবির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার প্রথম থেকেই ডাউটিয়া গ্রামের মৃত গাজীর উদ্দীনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে নিয়ে সন্দেহ করছিল এলাকাবাসী। সেই ব্যক্তিকে জনসম্মুখে হাজির করা হয়। তিনি রাতের আধারে অন্যের বিনা প্ররোচনায় প্রতিমা ভাংচুর করেছে বলে স্বীকার করে জানান, মাদ্রাসা আর কালী মন্দির ঘর কখনো একই জায়গায় থাকতে পারে না। 


আমি আগেই বলেছিলাম এখান থেকে সরাতে, তারা আমার কথা শোনেনি, কি করে পুরুষের বুকের ওপর পা রেখে মেয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? আমি কারোর নির্দেশে এ কাজ করিনি, আমার মন চেয়েছে তাই করেছি। প্রতিমা ভাংচুরের সময় কেউ সাথে ছিলনা। 


তিনি আরো বলেন, পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ আমাকে জিজ্ঞেস করছে মতিয়ার চেয়ারম্যান আর দিনার কত টাকা দিয়েছে প্রতিমা ভাংচুর করতে? আমি বলেছি তিনারা কোন টাকা পয়সা দেইনি, আমি নিজের ইচ্ছায় ভাংচুর করেছি, তারপর আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি শতবার বলবো, আমি নিজেই প্রতিমা ভাংচুর করছি, জেল হই হোক। 


ঘটনার পরিপেক্ষিতে হিন্দু নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ধলরাহচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছেন মতিয়ার রহমান বিশ্বাস। তার ছেলেও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা বাপ বেটা অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র মানুষ। আমরা তাদের কাছে মাতৃছায়ার মতো থাকি। কখনো তাদের কাছ থেকে কোন অন্যায় কাজ হতে দেখিনি। 


আমাদের পুজাতে তারাই পাহাড়া দিয়ে থাকেন। তাদের ছত্রছায়ায় আমরা শান্তিতে বসবাস করছি। তারাই আমাদের রক্ষক। আমরা কখনো বিশ্বাস করিনা, তার ছেলের দ্বারাই আমাদের প্রতিমা ভাংচুর হতে পারে। আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি এটা কোন তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্র। তারা সেসময় চেয়ারম্যানের উপস্থিততে দিনার নামের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমুলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। 


বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের চেয়ারম্যান রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, আমার টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, ওসি, এসপি ও ডিসির সাথে এ বিষয় নিয়ে আলাপ করবো, দেখি তার পদক্ষেপটা কি হয়। তবে যিনি প্রতিমা ভাংচুর করেছে, তিনি স্বীকারোক্তি দিয়েছে, সুতরাং নিরপরাধ ব্যক্তিরা সাজাভোগ করুক আমি তা চাই না। শতভাগ চেষ্টা করবো এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তি সাজা ভোগ করুক। 


তিনি আরো বলেন, পুলিশ যদি নিরপরাধ কাউকে জোর করে মেরে ধরে নিয়ে যায়, বিনা অপরাধে মামলা দিয়ে হয়রানি করে সেটি দুঃখজনক, পুলিশের এমন রাইট নাই।


মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই পলাশ ঘোষ জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে কোন কিছু বলতে পারবো না। যেহেতু এ মামলাটি নিয়ে এসপি ও ওসি স্যার নিজেইরাই দেখভাল করছেন। যদি কোন কিছু জানতে হয় সেটি ওসি স্যারের মাধ্যমেই আপনাদের জানতে হবে। 


উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে শৈলকুপা উপজেলার ডাউটিয়া গ্রামে শতবছরের পুরোনো কালীমন্দিরের মূর্তি ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন মন্দির কমিটির সভাপতি সুকুমার মন্ডল বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 


মামলার পর জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিট গত ১২ অক্টোবর শৈলকুপার উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কুশাবাড়ীয়া গ্রাম থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে এস এম আরব আলীর ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান হিরো, একই গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদ ও পাঞ্জাবী আলী খানের ছেলে তুষারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


আরএ