ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরী

লেখক: অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস একটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিপালিত দিবস। প্রতিবছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস বা বিশ্ব ক্যান্সার সচেতনা দিবস পালন করা হয়। এই দিনটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO) ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ক্যান্সার রোগীদের জীবন ধারার মান উন্নয়নে International Union Against Cancer-কে সহায়তা করে থাকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়।

ক্যান্সার একটি মারাত্মক ও ভীতিকর রোগ। শরীরের যে কোন অঙ্গেই এ রোগ হতে পারে। সারা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর একটি অন্যতম কারন ক্যান্সার। যেসব কারণে ক্যান্সার হয় তার ঝুঁকিগুলোর মধ্যে ধূমপান, পান-জর্দ্দা-তামাকপাতা খাওয়া, সবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, শারীরিক ব্যায়াম না করা, শারীরিক স্থূলতা বা বেশি ওজন, আলট্রাভায়োলেট রশ্মি, এক্সরে, রেডিয়েশন, কিছু রাসায়নিক পদার্থ, কিছু ভাইরাস বা অন্যন্য জীবানু অন্যতম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধিভূক্ত সংস্থা গ্লোবোক্যানের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। বছরে ক্যান্সারে মারা যায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে দেশে যত মানুষ মারা যান তার ৬৭ শতাংশ মানুষ ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসকদের মতে জনসচেতনতার অভাবেই ক্যান্সার প্রকোপ বাড়ছে। গ্লোবোক্যানের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বিশ্বে ১ কোটি ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৯৫৭ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯৫ লাখ ৫৫ হাজার ২৭ জনের। মৃতদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারে ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৭ জনের মৃত্যু হয়। যা মোট মৃত্যুর ১৮ দশমিক ৪ ভাগ। কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৯২ জনের। যা মোট মৃত্যুর ৯ দশমিক ২ ভাগ। স্টোমাক ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে ৭ লাখ ৮২ হাজার ৬৮৫ জন। যা মোট মৃত্যুর ৮ দশমিক ২ ভাগ। লিভার ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে ৭ লাখ ৮১ হাজার ৬৩১ জনের। যা মোট মৃত্যুর ৮ দশমিক ২ ভাগ। ব্রেস্ট ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৯ জনের। যা মোট মৃত্যুর ৬ দশমিক ৬ ভাগ। খাদ্যনালির ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ৫৮৫ জনের। যা মোট মৃত্যুর ৫ দশমিক ৩ ভাগ। প্যানক্রিয়াস ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ২৪২ জনের। যা মোট মৃত্যুর ৪ দশমিক ৫ ভাগ এবং অন্য ক্যান্সারে ৩৪ লাখ ২২ হাজার ৪১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা মোট মৃত্যুর ৩৫ দশমিক ৮ ভাগ।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিয়মগুলো হলো:

* বিভিন্ন ধরণের শাক-সব্জি ও ফল, শিম জাতীয় সব্জি, বাদাম এবং গোটা-শস্য খাওয়া। 
* নিয়মিত শরীর-চর্চা করা।
* অতিরিক্ত ওজন এড়িয়ে চলা।
* নিরাপদ যৌন জীবনযাপন করা। 
* সিগারেট, বিড়ি, ধোঁয়াহীন তামাক সেবন এড়িয়ে চলা। 
* মদ্যপান কমিয়ে দেওয়া।  
* ঐচঠ ও হেপাটাইটিস-বি প্রতিরোধের টিকা গ্রহণ করা।
* লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
* নিয়মিত ক্যান্সারের ও অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা করা। 

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে প্রত্যেকেই নিজেদের পছন্দসই ক্যান্সারবিরোধী জীবন যাপন করতে হবে। শুরুতেই ক্যান্সার নির্ধারণ করা গেলে জীবন বেঁচে যেতে পারে। ক্যান্সারের সাথে বসবাসকারী মানুষ এবং তাদের তত্ত্বাবধায়করা ক্যান্সার মোকাবিলায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। সঠিক সহায়তা পেলে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষরা আবার কর্ম জগতে ফিরে আসতে পারবে।

বাংলাদেশের বর্তমান ক্যান্সার পরিস্থিতি উত্তরণে প্রাথমিক প্রতিরোধের উপর জোর দিতে হবে সরকারকে। বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন তথা যাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যার যার জায়গা থেকে। একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি এ সমস্যা উত্তরণে সরকার, নীতি নির্ধারক মহল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল পুনর্গঠন ও কার্যকর করা জরুরী।

এসএ/