গাছ প্রেমী কৃষক মন্টু ফকির


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:০৯ অপরাহ্ন, ১৯শে নভেম্বর ২০২২


গাছ প্রেমী কৃষক মন্টু ফকির
মন্টু ফকির

গাছের সাথে যেন তার জন্ম জন্মান্তরের মিতালী। সকাল থেকে সন্ধ্যা জীবিকার সন্ধানে প্রতিনিয়ত ছুটে চলা গাছ পাগল মানুষটি নিজের সংসার খরচ বাঁচিয়ে কিনে নেয় একটি গাছ,সন্তান সম যত্নে পরম আদরে রোপন করা গাছটিকে মহিরুহ হয়ে উঠতে সাহায্য করে যে মানুষটি,সেই খেটে খাওয়া গাছ প্রেমী মানষুটির নাম  মন্টু ফকির। এলাকায় যে একাধিক নামে পরিচিত, কেউ বলে কবি মন্টু ফকির ,কেউ ডাকে শিল্পি মন্টু ফকির, কেউবা চেনে গাছ পাগল মন্টু ফকির। 


মন্টু ফকির বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের হাটুরিয়া পশ্চিম পাড়া গ্রামের রিয়াজ ফকিরের ছেলে। মন্টু ফকিরের পারিবারিক নাম মো.হযরত আলী। পরিবারের সদস্যদের ভরণ পোষনে সে কৃষি কাজ,রাজ মিস্ত্রির কাজ ও ভ্যান গাড়ী চালানোর মত কাজও করে থাকেন। পাঁচ জনের সংসারে বড় ছেলে রাকিব হোসেন নাকালিয়া হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র,মেজ ছেলে রাতুল একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে আর ৪ বছরের মেয়ে মরিয়মকে নিয়ে অভাবের অনাটনের মধ্যেও আমরা স্বামী-স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সুখ এবং আনন্দে দিন কাটাচ্ছি বলে জানান মন্টু ফকির। 

        

৪২ বছর বয়সি মন্টু ফকির দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এলাকার বিভিন্ন স্থানে গাছ রোপন করে আসছেন। নিজ উর্পাজিত টাকা দিয়ে হাট-বাজার,নার্সারী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা কিনে এনে এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয়,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে রোপন করে চলছেন। গাছ লাগানো সহ গাছের পরিচর্যা করা,প্রতিদিন সকাল-বিকাল গাছের পানি দেওয়া,বাঁশ বা নেট জাল দিয়ে গাছের চারদিকে ঘিরে দেওয়া সহ রোপন কৃত গাছের দেখভাল করা তার নিত্য দিনের কাজের মধ্যে পড়ে। 


কেন তার গাছ লাগানোর ইচ্ছা হলো,এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার জন্ম কৃষক পরিবারে,হাটতে শেখার পর থেকেই বাবার সাথে মাঠে যেতাম,একটু বড় হলে বাবার সাথে মাঠে কাজ করতাম। মাঠে কাজের সময় জান এবং নাম না জানা ফুল লতাগুল্মের চারা তুলে বাড়িতে নিয়ে এসে বুনে দিতাম। মাঠের মধ্যে একটি ঝাপড়া হিজল গাছ ছিল ছোট বেলায় দাদির কাছে গল্প শুনেছি,রাতে নাকি ঐ গাছটায় ভুত,পেত্নি থাকতো। 


দুপুরের প্রচন্ড গরমে আর ক্লান্তিতে মাঠে কাজ করা যখন অসম্ভব হয়ে উঠতো তখন কৃষকেরা হীজলের শীতল বাতাসে গাঁ জুড়িয়ে ক্লান্তি দুর করতো। কত দিন যে ঐ হীজল গাছটার নিচে দুপুরে ঘুমিয়েছি তার হিসেব নেই। যুবক বয়সেও মাঠে কাজ করতে গিয়ে হীজলের ছায়ায় বসে দুপুরে খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিয়েছি অগনিত দিন। জমিকে পুরোপুরি চাষ করা,বেশী ফসলের আশায় জমির মালিক কেটে ফেলে সেই ছায়া শীতল হীজলকে। খাঁ খাঁ রোদ্দুরে প্রকৃতি যখন তেঁতে আগুনের হলকা বের হতো তখন হীজলকে বড় মনে পড়তো,ওর অভাব আমরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি,এক অব্যক্ত যন্ত্রনা অনুভব করেছি,বলতে পারেন এখান থেকেই গাছ লাগানোর এমন ইচ্ছার জন্ম।

 

সামান্য লেখা-পড়া জানা মন্টু ফকির অবসর কাজের পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গান রচনা করে এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তা পরিবেশন করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। তিনি ঢাকায় বাংলা একাডেমী,শিল্পকলা একাডেমী,চারুকলা ইনিষ্টিটিউট,টিএসসি,গণজাগরণ মঞ্চ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মঞ্চে কবিতা,গজল,জারি-সারি,দেশাত্মবোধক,ফকিরি গান পরিবেশন করেছেন। 


২০১৪ সালে ঢাকা শিল্পকলা একাডেমীতে নিজের লেখা একটি দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে সম্মাননা ক্রেস্ট পেয়েছিলেন বলে তিনি জানান। 


আরএক্স/