মহসিনের আত্মহত্যার ভিডিও সরানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
ব্যবসায়ী
মহসিনের আত্মহত্যার ভিডিও ৬ ঘণ্টার মধ্যে ফেসবুক থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসাথে ভিডিওটি যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন
আদালত।
বৃহস্পতিবার
(৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এস মনিরুজ্জামানের হাইকোর্টের
দ্বৈত বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
আদালত
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। একইসঙ্গে বিটিআরসিকে
এ বিষয়ে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য,
মোহাম্মদ আবু মহসিন খান বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৯টার দিকে ধানমণ্ডির নিজ বাসায়
বসে তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন। সেখানে লাইসেন্স করা পিস্তল মাথায় ঠেকিয়ে গুলি
করে আত্মহত্যা করেন তিনি। তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজের শ্বশুর।
আত্মহত্যার
আগে তিনি বলেন, হসিন খান
বলেন, আমার বয়স ৫৮ বছর, কোনো একসময় আমি খুব ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসার
রোগে আক্রান্ত। তাই এখন আমার কোনো ব্যবসা বা কোনো কিছুই নেই। আজকের লাইভে আসার উদ্দেশ্য
হচ্ছে আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের জানানো। এ অভিজ্ঞতা থেকে আপনারা হয়তো অনেক কিছু জানতে
পারবেন, সাবধানতা অবলম্বন করবেন। গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। উনার একটি ছেলে,
কিন্তু মা মারা যাওয়ার খবরে পেয়েও সে দেশে আসেনি। এ বিষয়টি আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে।
তিনি
আরও বলেন, আমার একটা ছেলে, সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে, আমি আমার বাসায় সম্পূর্ণ একা থাকি।
খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে ভয় ঢুকে গেছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়ে থাকি,
আমার মনে হয় না, এক সপ্তাহেও কেউ জানতে পারবে না। এজন্য লাইভে আসা।
আমরা
সবকিছুই করি ছেলে-মেয়ে স্ত্রী-পরিবারের জন্য। গত করোনা শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে
আছি। একা থাকা যে কি কষ্ট, যারা একা থাকে তারাই এই কষ্ট বুঝে। আমার জীবনে আমি যাদের
জন্য বেশি করেছি, তাদের দ্বারাই বেশি প্রতারিত হয়েছি।’
‘আমার একজন বন্ধু ছিল কামরুজ্জামান বাবুল,
তাকে আমি না খেয়ে খাইয়েছি সহযোগিতা করেছি। সে আমার প্রায় ২৩-২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে।
এভাবে আমি সব মিলে মানুষের কাছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা পাই।’
‘সবশেষ আমি নোবেল নামে একজনকে আমার মিনারেল
ওয়াটার প্রজেক্টের মেশিন আনার জন্য ৭ লাখ টাকার বেশি দেই। সে আড়াই বছরে মেশিন আনেনি।
পরে ঝগড়াঝাঁটি করার পর ৭০ হাজার টাকা দিয়েছে। মানুষ কেন এতো লোভী হয়। মানুষ অন্যের
টাকা কেন ছলচাতুরী করে নিয়ে যায়। আমি তো কারো অপকার করিনি।’
‘পৃথিবীতে আপনি আপনার। ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী
কেউ আপনার না। আজ আপনি আপনার ফ্যামিলিকে যেভাবে মেনটেইন করেন কাল সেভাবে না করলে পরিবারের
সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। তারা কেন বুঝে না যে একজন যুবককালে যে আয় করে বয়স হলে তেমন
পরিশ্রম করতে পারে না। আয়ও কমে যায়। এসব বিষয় নিয়ে আমি অনেকদিন ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
জীবনে প্রতারিত হতে হতে আমি শেষ। আমার বাবা পর্যন্ত আমাকে সম্পদ বুঝিয়ে দেয়নি। যতটুকু
করেছি নিজের বলে করেছি। তবে কিছুদিন ধরে জীবনের প্রতি এতোটাই বিতৃষ্ণা এসে গেছে এখন
আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না।’
‘আমি জানি আমি যদি আত্মহত্যা না করি, এই
ঘরে আত্মহত্যা করি, মরে পরেও থাকি তাহলে কেউ জানবেও না। হয়তো অনেকদিন পর জানবে। আমার
আত্মীয় যারা দেখছেন তাদের বলতে চাই, আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।’
‘সন্তানদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বাবারা
না খেয়েও সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করে, ফ্যামিলিকে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ফ্যামিলি
অনেক সময় অনেক কিছু বুঝতে চায় না। কেন বুঝতে চায় না... নিজেকে আর মানায়া নিতে পারলাম
না।’
‘যারা দেখছেন, এটাই হয়তো আপনার সাথে আমার
শেষ দেখা। সবাই ভালো থাকবেন।’
আমি
যেটা দিয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছি। সেটা লাইসেন্স করা পিস্তল। আমি এই মুহূর্তে এখন
চলে যাবো। আত্মীয়-স্বজন যারা ছাড়ো, আমাকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে যে কবরস্থান হয়েছে,
আমাকে সেখানে দাফন করো। এটাই আমার জন্য ভালো হবে।’
‘কারণ প্রত্যেকটা লোক আমার সাথে প্রতারণা
করেছে। আমার বাবা-মা, ভাইয়েরা।’
এই
লাইন বলেই কালেমা পড়ে তিনি নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন। লাইভের ১৬ মিনিট
১৫ সেকেন্ডের মাথায় তিনি আত্মহত্যা করেন। তার আত্মহত্যার পরও লাইভ চলছিল। প্রায় এক
ঘণ্টা ধরে এই লাইভ চলমান থাকে।
এ
বিষয়ে জানতে নায়ক রিয়াজকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না।’
পরে তিনি মুঠোফোনটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
ওআ/