দ্রব্যমূল্য লাগামহীন, জনগণের নাভিশ্বাস


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


দ্রব্যমূল্য লাগামহীন, জনগণের নাভিশ্বাস

আমার এক ব্যবসায়ী বন্ধু আমাকে একটা প্রশ্ন করে বলল, ভাই বলেন তো, আগে মাসে বিশ হাজার টাকা আয় করে পাঁচ হাজার টাকা ব্যাংকে সঞ্চয় করে রাখতে পারতাম, আর এখন প্রতিমাসে প্রায় এক লক্ষ টাকা আয় করেও ব্যাংক থেকে প্রতি মাসে প্রায় বিশ হাজার টাকার মত উঠাতে হয়, কেন এমন হয় আর এর কারনই বা কি, আমার পরিবারের লোক সংখ্যা তো বাড়ে নাই,আগেও যা ছিল এখনও তাই আছে। আমি কি উত্তর দিব আর কি বা বলব কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না, শুধু বোকার মত তাকিয়ে ছিলাম, কারন আমার অবস্থাও ততৈবচঃ। 

তবে তখন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর পাদটীকা গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। পাদটীকা গল্পের সারমর্ম ছিল, লাট সাহেব স্কুল ভিজিটে এসেছেন, বিরাট একটি লাট বহর নিয়ে, সঙ্গে একটা তিন ঠ্যাং ওয়ালা  কুকুরও ছিল। স্কুলের পন্ডিত মশাই জানতে পারেন ঐ তিন ঠ্যাং ওয়ালা কুকুরের পিছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়। লাট সাহেব চলে যাওয়ার পর পন্ডিত মশায় পরে ক্লাশে গিয়ে ছাত্রদের সবাইকে জিজ্ঞেস করে, অংকের শিক্ষিক মদনমোহন কি রকম আঁক (অংক) শেখায় রে। ছাত্ররা বলে ভালই পড়ান। তখন পন্ডিত মশাই বলেন যদি তিন ঠ্যাং ওয়ালা কুকুরের পিছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয় তাহলে প্রতি ঠ্যাংয়ের জন্য কত খরচ হয়, ছাত্ররা সবাই বলে পঁচিশ টাকা। তখন পন্ডিত মশাই বলেন আমি, ব্রাহ্মুনী, বৃদ্ধা মাতা, তিন কন্যা, বিধবা পিসি ও দাসী একূনে আটজন। আমাদের সকলের জীবন ধারনের জন্য মাসে মাইনে পাই পঁচিশ টাকা। এখন বল তো দেখি এই ব্রাহ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের ক’টা ঠ্যাংয়ের সমান। সমস্ত ক্লাশ নিস্তব্ধ, কেও কোন উত্তর দেয় না। 

লেখক ওখানে বলেছেন “নিস্তব্ধতা হিরন্ময়”, হরষবহপব রং মড়ষফবহ, যে মূর্খ বলেছেন তাকে যেন মরার পূর্বে একবার একলা - একলি পাই। সুতরাং সব চুপ থাকাই ভাল নয়। আমি নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বললাম, আপনি কি মনে করেন। ভদ্রলোক রেগে ফায়ার। তার আক্ষেপ গরীব লোকদের দেখারও কেও নেই, বলারও কেও নেই, কারন তাই যদি না হবে সময়ে অসময়ে দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, যেন মগের মূল্লক। যার যখন ইচ্ছে তখন তিনি জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এক পয়সা ট্রাম ভাড়া বাড়লে দল মত নির্বিশেষে সকল লোক এক সঙ্গে প্রতিবাদ করে।  প্রতিবাদের ঝড়ে সব কিছু অচল হয়ে পড়ে। আর আমাদের দেশে সব তার উল্টো। সব যেন মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা। নিত্যপণ্যের মধ্যে চাল, ডাল বিশেষ করে মসুরের ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, চা, ভোজ্য তেল বিশেষ করে সয়াবিন তেল, মসলা, সাবান, মাছ- মাংস কেরোসিন, ডিজেল থেকে শুরু করে সকল ধরনের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। যাদের বাজার মনিটর করার কথা তারা সম্ভবতঃ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন, তাহ না হলে মূল্য বৃদ্ধি দেখে পেপার পত্রিকায় অন্ততঃ মাঝে মধ্যে দুই একটা বিবৃতি দিতে পারত। আসলে জনগণের কাছে কেও মনে হয় দায়বদ্ধ নাই, কারণ জনগণের কাছে জবাবদিহীতা থাকলে অন্ততঃ জনগনের কথা একটু হলেও মনে হত। গত দুই বৎসরে বিদ্যূৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে বেশ কয়েকবার। গত ৩রা জানুয়ারী হতে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়ল। বেসরকারী খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজির মূল্য ১ হাজার ১৭৮ থেকে বেড়ে ১ হাজার ২৪০ টাকা করা হয়েছে। এতে প্রতি কেজি গ্যাসের দাম বেড়েছে ৫ টাকা ১৭ পয়সা । ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ৬২ টাকা। এছাড়াও পরিবহনেও জ্বালানী হিসাবে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে, যা আটো গ্যাস নামে পরিচিত। প্রতি লিটার আটো গ্যাসের দাম ৫৭ টাকা ৯১ পয়সা করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৫৪ টাকা ৯৪ পয়সা । আটো গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হওয়ার দরুন পণ্যের পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাবে যেটা সাধারন জনগনকে আরো বেশী ভোগান্তিতে ফেলবে। ইতিমধ্যেই পাইপ লাইনের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। 

আর বাংলাদেশে প্রস্তাব মানে ধরেই নেওয়া যায় ওটার মূল্য বৃদ্ধি হয়ে গেছে, শুধুমাত্র আনুষ্ঠিকথাই বাঁকী আছে। এক তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ বেকার লোক আছে, করোনার কারণে প্রায় ৩ কোটি লোক দরিদ্র সীমার নিচে নেমে গেছে, সে হিসাবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোকের ক্রয় ক্ষমতা নাই বললেই চলে। সেই অবস্থায় গ্যাস বিদ্যূতের মূল্য বৃদ্ধি ঠিক মরার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কিছুই নয়। 

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল আগামী ১৬ই ফেব্রুয়ারী দেশবাসীকে ‘দাম কমাও, জান বাঁচাও দিবস’ পালনের আহবান জানিয়েছেন। অভিনব এই কর্মসূচী সংশ্লিষ্ট মহলকে কতখানি নাড়া দিতে পারবে, আর গরীব মানুষ কতখানি উপকৃত হবে সেটাই দেখার বিষয় ।

লেখক: এড. মোঃ মোজাম্মেল হক, আইনজীবী, বগুড়া।

এসএ/