সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, ৬ই জানুয়ারী ২০২৩
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
জাতীয় সংসদকে দেশের জনগণের ‘সকল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আবদুল হামিদ সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম এ দেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ। আপনারা জনপ্রতিনিধি, তাই জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল বঙ্গবন্ধুর সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে।
প্রতিবারের মত এবারও মন্ত্রিসভার ঠিক করে দেয়া ১৬৮ পৃষ্ঠার ভাষণের সংক্ষিপ্তসার অধিবেশনে পড়েন রাষ্ট্রপতি।
সংসদের প্রথম এবং নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেয়ার বিধান রয়েছে। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর একটি ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয়। পুরো অধিবেশনজুড়ে ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
বিকেল ৪টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
অধিবেশন শুরুর পর শোক প্রস্তাব আনা হয়। সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম গোলাম মোস্তফা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এস এ মালেক, শাহ মুহাম্মদ আবুল হোসাইন, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, আলাউদ্দীন আহাম্মদ, মো. মসিউর রহমান, এস এম ফারুক, মো. শাহজাহান খানের মৃত্যুতে সংসদ শোক প্রকাশ করে।
এছাড়া জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অফিস সহায়ক মো. মাহবুব আলম প্রধানের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতি ঢোকার পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। স্পিকারের ডান পাশে রাখা চেয়ারে তিনি আসন নেন।
স্পিকারের অনুরোধের পর রাষ্ট্রপতি তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন। এসময় তার মূল বক্তব্য ‘পঠিত’ বলে গণ্য করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিনকে অনুরোধ জানান আবদুল হামিদ। স্পিকারের আসনের বাম পাশে রাখা ‘রোস্ট্রামে’ দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন তিনি।
মূল ভাষণের সংক্ষিপ্তসারে রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন। এছাড়া দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। এছাড়া মহামারী ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে এর প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ আমরা অতিবাহিত করছি। ২০২২ সাল ছিল চ্যালেঞ্জের একটি বছর। সমগ্র বিশ্বই পার করছে এক কঠিন সময়। করোনা অতিমারি আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করে অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে। তারপরও ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’-এ নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য করা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে।
সূত্র: বাসস