গরিবের বাজারে এখন আর স্বস্তি নেই
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:০৯ পূর্বাহ্ন, ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গরিবের বাজারে আগে ১০ টাকার আলু কেনা যেত, এখন দাম বাড়ায় আলু কিনতে হচ্ছে ৩০ টাকায়। এখন আর গরিবের বাজারে কোন স্বস্তি নেই। রিকশাচালক, দোকানের কর্মী, বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক, গৃহকর্মী সহ নিম্ন আয়ের মানুষগুলোই মূলত এই বাজারের ক্রেতা ছিল ।
দুপুরের রান্নার জন্য টমেটো, কাঁচা মরিচ ও আলু কিনতে সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা চৌরাস্তা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গরিবের ভাসমান বাজারে' আসেন , স্থানীয় একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক নাজমা আক্তার।এখানে এসে তিনি দেখেন যে আগে দোকানটিতে ৩০ টাকায় কেজির কাঁচা মরিচ বিক্রি হত, সেই দোকানটিতে ১২০টাকায় বিক্রি হচ্ছে । অন্য দুটি দোকানে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ টাকা কেজি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে । কিন্তু এত দামে বাঁধাকপি কেনার টাকা না থাকায় তিনি শুধু ১০ টাকার গুঁড়া মরিচ কিনেই ফিরে যান।
মাওনা চৌরাস্তার গৃহকর্মী আসমা আক্তার বলেন,৩০ টাকা কেজি বাঁধাকপি বিক্রির দোকানটি বন্ধ থাকায় বাঁধাকপি কিনতে পারি নাই আমার কাছে বেশি টাকা নেই। এখন কারও কাছ থেকে একটু শাক পাতা ধার করে রান্না করতে হবে।'
তবে বড় বড় দোকানগুলোতে চাল, গম, তেল, আটা, ময়দা সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে এই গরিবের বাজারেও। এখানেও সব পণ্যের দাম বেড়েছে ।
সোমবার সকালে বাজার ঘুরে দেখা যায়, ২০ টাকার পলিব্যাগের মধ্যে সয়াবিন তেল রাখা হয়েছে। আগে ১০ টাকার তেল কেনা যেত, এখন দাম বাড়ায় তেলের প্যাকেট কিনতে হচ্ছে ২০ টাকায়। বাজারটিতে ১০-১৫ টাকার সবজিও বিক্রি হয়। ১০ টাকার টাকার বরবটি, ১৫ টাকার বেগুন এসব বেছে বেছে কিনতে দেখা গেছে কাউকে এখন আর চোখে পড়ছে না এসব।
আয়েশা বেগম জানান, দুটি বাসায় কাজ করে প্রতি মাসে তার আয় ৫ হাজার টাকা। গ্রামে থাকা দুই সন্তানের পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ বাবদ ১৫০০ টাকা করে পাঠাতে পারতেন। কিন্তু এখন সবকিছুর খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাড়িতে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। তেলের দাম বাড়ার পর থেকেই তিনি নিয়মিত তেল ছাড়া রান্না শুরু করেছেন।মাস ছয়েক আগে বাসাবাড়িতে কাজ করলেও এখন ছোট সন্তানের জন্য কাজ করতে পারছেন না আয়েশা বেগম। স্বামী সিএনজি চালিয়ে যা আয় করেন তাতেই নিজের সংসার খরচ, শ্বশুরবাড়িতেও খরচ পাঠাতে হয়।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন আমির হোসেন। পরিবার নিয়ে বস্তির একটি টিনশেডে ৩ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া থাকেন। দুই সন্তান, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে তার বসবাস। যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছেন।তিনি বলেন, 'আগে মাসে ২ দিন মুরগি কিনতাম, এখন সেটা একদিনে এনেছি।' স্থানীয় ভাষায় বললেন আমাগোরে গরিব মানুষের জন্য যদি সরকার মুরগির সহ কাঁচা সবজির দামটা কমাতে কোনরকম স্বস্তিতে জীবন যাপন করতে পারতাম।
মাওনা চৌরাস্তার বাজারের মুরগি বিক্রেতা তোফাজ্জল বলেন, '৮ বছর ধরে ব্যবসা করি এই বাজারে। এমন সংকট কখনও দেখিনি । মুরগি বিক্রি কমে গেছে। মুরগির দাম ২০০ টাকা কেজি হলেও এটা রান্না করতে তো তেল সহ মসলা লাগে। এই জন্য অনেকেই এখন মুরগি কিনছে না। প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার মুরগি বিক্রি হলেও এখন সেটা ২-৩ হাজারে নেমে এসেছে।
ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিত্য ব্যবহৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে চাপে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষ। এ ব্যাপারে তারা দায়ী করছেন সরকারকে ।প্রতিদিন খাবার কমিয়ে দিয়ে, একটু সস্তার বাজার খুঁজে কেনাকাটা করে কোনোরকমে পরিবার সামলাতো এই মানুষেরা। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরিব মানুষেরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। গরিব মানুষের জানান, সরকার বাজার মনিটরিং সঠিক ভাবে না করায় বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
আরএক্স/