ঘাটাইলে আওয়ামীলীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০:৩৬ অপরাহ্ন, ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩


ঘাটাইলে আওয়ামীলীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষ
ঘাটাইলে আওয়ামীলীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষ

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১১ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ছয় রাউন্ড টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।


সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সড়কে নেতাকর্মীদের অবস্থানের জন্য দুই ঘণ্টা টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।


পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত রোববার আওয়ামী লীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে ঘাটাইল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলার আনেহলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তালুকদার মোহাম্মদ শাহজাহান। পরে তারা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও কলেজমোড় চত্বরে টায়ারে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে।


তাদের দাবি, জামায়াত-বিএনপির সমন্বয়ে হাইব্রিড, পক্ষপাতদুষ্ট ও অনিয়মতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিকভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘোষিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ২৯ জনই জামায়াত বিএনপি ঘরানার ও অনুপ্রবেশকারী। তারা বর্তমান কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবুর বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য ও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ করেন।


পদবঞ্চিতদের ওই কর্মসূচির প্রতিবাদে ঘোষিত নবগঠিত কমিটির নেতাকর্মীরা সোমবার বিকেল ৩টায় উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। অপরদিকে পদবঞ্চিত অংশের নেতাকর্মীরা কলেজমোড় চত্বরে পাল্টা সমাবেশের আয়োজন করে। দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের দু’পাশে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। পুলিশ উপজেলা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে অবস্থান নেয়। দুই পক্ষের মাহসড়কে অবস্থানের ফলে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।


গুরুতর আহতরা হলো, বাহাদুর আলম খান (৫৫), ফজলুর রহমান (৬৫), আবুল কাশেম (৬৫), সালাহউদ্দিন শাহীন (৫০), মো. শাহীন।


নবগঠিত কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু এ ঘটনার জন্য সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানাকে দায়ী করেন।


তিনি জানান, দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জামায়াত-বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। শান্তি মিছিল বাসস্ট্যান্ড চত্বরে গেলে সাবেক এমপি রানার অনুসারীরা নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে পাঁচ নেতাকর্মী গুরতর আহত হয়। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান।


পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের পক্ষে আনেহলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তালুকদার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বর্তমান কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু একজন দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি সাত থেকে আট শ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তৃণমূলের নিবেদিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে পদ বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি জামায়াত-বিএনপির লোক নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই কমিটি মানেন না। যে পর্যন্ত এ কমিটি বাতিল না করা হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।


ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, এ ঘটনায় প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়ে পুলিশ ছয় রাউন্ড টিয়ারশেল ও শটগানের ৩১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এছাড়া, ৫০জন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।


আরএক্স/