আদালতে জবানবন্দিতে যা বললেন শাকিব খান


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন, ২৪শে মার্চ ২০২৩


আদালতে জবানবন্দিতে যা বললেন শাকিব খান
শাকিব খান

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকির অভিযোগে প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।


আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি দাবি করেন, রিফ্রেশমেন্টের জন্য প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ শাকিবকে নামিদামি একিট ক্লাবে নিয়ে যান। ক্লাবে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পানীয় পান করেন শাকিব খান। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থবোধ করেন। সেসময় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার নায়িকা অ্যানি রেনেসা সাবরিন শাকিবকে জানান, আপনি যেহেতু অসুস্থবোধ করছেন তাহলে চলেন আমি আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি। শাকিব অনেকটা নিরুপায় হয়েই তার প্রস্তাবে রাজি হয়। হোটেল রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে পথে শাকিব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অজ্ঞান হয়ে যান। ঘটনার পরদিন সকালে মামলার আসামি রহমত শাকিবকে ফোনে জানান, তুমি রাতে ওই মহিলার সঙ্গে কী করেছ সব কিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে এক লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা না দাও তাহলে আমি সব ভিডিও ক্লিপ ও অ্যানি রেনেসা সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে তোমার নামে কমপ্লেইন করব এবং তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না। ওই সময় প্রযোজক রহমত উল্লাহ তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন সুপারষ্টার।


বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে শাকিব খান চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে মামলা করেন। এসময় আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে রহমত উল্লাহকে আগামী ২৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারি করেছেন আদালত।


জবানবন্দিতে শাকিব আরও বলেন, “রহমত উল্ল্যাহ এ ছবির কেউ না। এ ছবির প্রযোজক জানে আলম। রহমত উল্ল্যাহ ঠগ, প্রতারক ও চাঁদাবাজ। আমার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করে সে পার পেয়ে গেলে ভবিষতে অনেকে ভুক্তভোগী হবেন। অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার শুটিংয়ে শিডিউল ফাঁসানো ও সহ-নারী প্রযোজককে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলে আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ ডলার নেন রহমত উল্ল্যাহ।”


তিনি বলেন, “২০১৬ সালে আমি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার শুটিং এর জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাই। সেখানে শিডিউল ফাঁসানো ও সহ-নারী প্রযোজককে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ তোলেন রহমত উল্ল্যাহ। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের কাছে এ বিষয় কোনও অভিযোগ নেই। অস্ট্রেলিয়ায় যে নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করার কথা তিনিও কোনও অভিযোগ দেননি।”


শাকিব খান আরও বলেন, ‘ছবির বিষয় জানে আলমের সঙ্গে আমার কন্ট্রাক্ট হয়। রহমত উল্ল্যাহ কোনও প্রযোজকই না। তিনি আমার কাছে আরও একলাখ ডলার দাবি করেছেন। চাঁদার টাকা পাওয়ার জন্য আমার ক্যারিয়ার নিয়ে হুমকি দেন রহমত উল্ল্যাহ।’


এদিন সকালে আদালতে মামলা করতে আসেন শাকিব খান। এরপর তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। এসময় তার চোখে কালো চশমা ও মাথায় ক্যাপ পরা ছিল। পরনে ছিল সাদা টিশার্ট ও জিন্স প্যান্ট।


ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার পর শাকিব খান একই ঘটনায় আরেকটি মামলা করতে সাইবার ট্রাইব্যুনালে যান। ট্রাইব্যুনালের বিচারক সোমবার (২৭ মার্চ) তাকে আদালতে আসতে বলেন।


মামলার অভিযোগে শাকিব খান উল্লেখ করেছেন, ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলা ছায়াছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক ছবিতে অভিনয় করতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভারটেক্স মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী মো. জানে আলমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন শাকিব। চুক্তি অনুযায়ী, ছবির নায়িকা হিসেবে শাকিব খানের বিপরীতে শিবা আলী খানকে মনোনীত করা হয়।


শুটিং করতে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ায় যান শাকিব। এরপর তিনি জানতে পারেন ছবিতে আগে থেকে মনোনীত নায়িকা শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ এর শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া আসতে পারেননি। তার জায়গায় অ্যানি রেনেসা সাবরিন নামের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এক নারীকে নায়িকা হিসেবে তার সঙ্গে অভিনয় করার জন্য মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ শাকিবকে অনুরোধ করলে তিনি তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে প্রস্তাব নাকচ করেন।


প্রযোজক রহমত উল্লাহ শাকিবকে ফাঁদে ফেলার জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশা করেন। এরপরই শাকিবের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ভয়ভীতি দেখান রহমত উল্লাহ। একপর্যায়ে শাকিব ভয় পেয়ে ক্যারিয়ার ধ্বংসের কথা চিন্তা করে  তিনি ভাবেন, যেহেতু তিনি অজ্ঞান ছিলেন সেহেতু তারা তার সঙ্গে এমন কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে।  রহমত উল্লাহ শাকিবকে হুমকি দেন ডলার পরিশোধ না করলে সব ভিডিও ক্লিপ তিনি মিডিয়াতে দিয়ে দেবন এবং ভিডিও ক্লিপসহ অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের কাছে অভিযোগ করবেন। শাকিব ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে আসামি রহমত উল্লাহকে তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার প্রদান করেন।